শিল্পখাতকে বাঁচাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নয়

এফএনএস | প্রকাশ: ৪ মার্চ, ২০২৫, ০৭:১০ পিএম
শিল্পখাতকে বাঁচাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নয়

শিল্পক্ষেত্রে গ্যাস ও বিদ্যুতের ব্যবহার ছাড়া আমরা আর কিছু চিন্তাই করতে পারি না। গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে এক প্রকার অস্থিরতা চলছে। গ্যাস-সংকট, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং উৎপাদন ব্যয়ের চাপ শিল্প খাতকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। গ্যাসের সরবরাহ নেই, ফলে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। একের পর এক অর্ডার বাতিল হচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমছে। এক বছর ধরে এই খাত চরম দুরবস্থার মধ্যে আছে। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলার অবনতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এখনো কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি। দেশের শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা আজ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সরকারের নেতিবাচক সিদ্ধান্তে নানা শঙ্কায় ভুগছেন শিল্পমালিকরা। শিল্পকারখানা ও ক্যাপটিভে গ্যাসের নতুন সংযোগের দাম দ্বিগুণ করার পর এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় চলছে। জ্বালানি বিভাগ জানিয়েছে, আমদানিকৃত এলএনজির খরচ যা পড়বে, সেই দর অনুযায়ী নতুন শিল্পকারখানার মালিকদের কাছ থেকে গ্যাসের দাম আদায় করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়তে পারে দ্বিগুণের বেশি। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। এটি বাস্তবায়ন হলে ধ্বংস হয়ে যাবে দেশের শিল্প খাত। নতুন করে কেউ কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়তে চাইবে না। এক দেশে দুই আইন থাকলে শিল্প খাতে দেখা দেবে বিশৃঙ্খলা। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়া, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, ডলার সংকট, কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হওয়া, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়াসহ আরো অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতিও শিল্পের সংকট বাড়াচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, অচিরেই শিল্প খাতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করার প্রস্তাব শিল্প খাতের ওপর এক চরম আঘাত হয়ে আসবে বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা ও অর্থনীতিবিদরা। শিল্প খাত নানা সংকটের মুখে রয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ ও বেতন-ভাতা বকেয়া থাকার কারণে বেশকিছু কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। দেশে গ্যাসের উৎপাদন ক্রমেই কমছে। নতুন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল নির্মিত না হলে আমদানিও বাড়ানো যাবে না। আগামী দুই বছরেও নতুন টার্মিনাল চালুর তেমন সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়লে শিল্প খাত দ্বিমুখী সংকটে পড়বে। নতুন বিনিয়োগ হবে না। বিদেশি বিনিয়োগও আসবে না। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের জোগান কমলেও বাড়েনি এলএনজি আমদানি। অন্যদিকে শিল্পে গ্যাসের ব্যবহার কমেছে ২ শতাংশ। তারপরও আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে আবারও আড়াইগুণ দাম বাড়ানোর পাঁয়তারায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশের শিল্প খাতকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে সরকারকে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নয় বরং কমানোর চেষ্টা করা জরুরি।