প্রায় ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন গালিব দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আক্তারুল ইসলাম জানান, অভিযুক্তরা যেকোনো সময় দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করতে পারে বলে তাদের বিদেশযাত্রা বন্ধে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন এ মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্বে থাকা আতিউর রহমান এবং ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে থাকা আবুল বারকাতসহ অভিযুক্তরা জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে জনতা ব্যাংকের করপোরেট শাখা থেকে ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা ঋণ আত্মসাৎ করেছেন।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা ব্যাংকে বন্ধক রাখা জমিতে কোনো ভবন, কারখানা বা স্থাপনা না থাকলেও জাল দলিল তৈরি করে অতিমূল্যায়ন করে ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করেছেন। এ ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে তারা অ্যাননটেক্স গ্রুপের অধীনে থাকা ২২টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান, সাবেক সহকারী পরিচালক ইসমত আরা বেগম, সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দীপু, আর এম দেবনাথ, আবু নাসের, সঙ্গীতা আহমেদ ও নিতাই চন্দ্র নাথ।
এছাড়াও জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আব্দুস সালাম আজাদ, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক আজমুল হক, সাবেক এজিএম অজয় কুমার ঘোষ, জনতা ব্যাংকের করপোরেট শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক গোলাম আজম, নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান, এমদাদুল হক, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক আব্দুল জব্বার, সাবেক ডিএমডি গোলাম ফারুক, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক, অ্যাননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইউনুছ বাদল, সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন ও পরিচালক আবু তালহাও এ মামলার আসামি।
দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা মামলার শুনানিতে আদালতকে জানান, মামলাটি এখন তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। অভিযুক্তরা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তদন্ত ব্যাহত হতে পারে। এ কারণে তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা জরুরি।
এ মামলায় অভিযুক্তরা প্রতারণা, জালিয়াতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দুদকের তদন্তে প্রাথমিকভাবে এ তথ্য উঠে এসেছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারির পর এখন অভিযুক্তরা দেশ ছাড়তে পারবেন না।