সাতক্ষীরার মিঠা পানির শুটকি মাছ ভারতে রপ্তানি

এফএনএস (মোঃ মুজিবুর রহমান; পাটকেলঘাটা, সাতক্ষীরা) : | প্রকাশ: ৬ মার্চ, ২০২৫, ০৭:১০ পিএম
সাতক্ষীরার মিঠা পানির শুটকি মাছ ভারতে রপ্তানি

সাতক্ষীরার মিঠা পানির শুটকি মাছ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের মাটিতে রপ্তানি হাওয়াই  সাতক্ষীরা সহ  দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে বর্তমানে মিঠা পানির  এ শুটকি মাছ। 

জেলার  খাল-বিল, পুকুরসহ বিভিন্ন জলাশয় থেকে সংগৃহীত মিঠা পানির মাছের শুঁটকির কদর বেড়েছে। এখন সব জায়গায় এ জেলার মিঠা পানির মাছের শুঁটকি যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, নীলফামারী, পঞ্চগড়, গোপালগঞ্জ, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে মিঠা পানির এ  শুটকি  মাছ  বাংলাদেশের গণ্ডি  পেড়িয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও রপ্তানি হয়। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সাতক্ষীরার শুঁটকি।

উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় ১২ মাসই বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয়। এসব মাছের মধ্যে লোনাপানির বাগদা ও গলদা চিংড়ি ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। এছাড়া মিঠাপানির মাছ উৎপাদন হয় বছরে দেড় লক্ষাধিক টন, যার ৮০ শতাংশই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। তবে কয়েক বছর ধরে চ্যাপা শুঁটকি রফতানি হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে।

শীতের শুরুতেই শুটকি তৈরির মৌসুম শুরু হয়।যার কারনে  এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার শ্রমিকরা। জেলার বিনিরপোতা  এলাকায় বেদনা নদীর পাড়ে  গড়ে  উঠেছে শুটকি পল্লী  ২০১৭ সালে সাতক্ষীরা শহরের উপকণ্ঠে বেতনা নদীর তীরে শুঁটকি কারখানা গড়ে তোলেন জনৈক প্রশান্ত বিশ্বাস। তিনি জানান 

 প্রতিদিন নদী থেকে পুঁটি মাছ সংগ্রহ করার পর তা বিশেষ প্রক্রিয়ায় শুঁটকি করা হয়। শুঁটকিপল্লী ঘিরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে অনেকের। শুঁটকি উৎপাদন বাড়াতে জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দেয়া হচ্ছে। সাতক্ষীরার মিঠা পানি শুটকি সারা দেশে সুনাম অর্জন করেছে। বর্তমানে শুটকি মাছ  বিভিন্ন বড় বড় আড়তদারদের  মাধ্যমে ভারতে ও  রপ্তানি হচ্ছে। 

শুঁটকি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স প্রান্তি এন্টাপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী প্রশান্ত কুমার জানান, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মিঠাপানির পুঁটি মাছ সংগ্রহ করার পর তাতে লবণ মিশিয়ে শুঁটকি করা হয়। এরপর বাছাই করে তা নীলফামারী, রংপুর ও চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হয়। প্রতি কেজি শুঁটকি ২৭০-৩০০ টাকায় বিক্রি করেন। ভারতেও রফতানি হয় এসব শুঁটকি। বছরে ৪০০-৫০০ মণ শুঁটকি উৎপাদন করেন তিনি।

সাতক্ষীরার বল্লী গ্রামের সাধন কুমার পুঁটি মাছের পাশাপাশি সিলভার কার্প, মৃগেল ও তেলাপায়িা মাছ শুঁটকি করে বিক্রি করেন। প্রতি বছর ৩৫০-৪০০ মণ শুঁটকি উৎপাদন করেন তিনি। এরপর এসব শুঁটকি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। প্রকারভেদে প্রতি মণ শুঁটকি ১১-১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।

শুঁটকি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান নীলফামারীর সৈয়দপুরের মেসার্স সাহরিয়ার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. সাহাবুদ্দিন  জানান, ভারতের বাজারে চ্যাপা শুঁটকির বেশ চাহিদা রয়েছে। প্রতি মৌসুমে সাতক্ষীরা থেকে ৪০০-৫০০ টন শুঁটকি সংগ্রহ করেন। এরপর তা ভারতে রফতানি করেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাতক্ষীরায় বিপুল পরিমাণ মিঠাপানির মাছ উৎপাদন হয়। ভরা মৌসুমে অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এসব মাছের দাম থাকে তুলনামূলক কম। বছরের এ সময় এসব মাছ যদি শুঁটকি করে বাজারজাত করা হয়, তাহলে লাভবান হতে পারবেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিএম সেলিম  বলেন, ‘মাছ চাষে সমৃদ্ধ জেলা সাতক্ষীরা। রফতানিজাত বাগদা ও গলদার পাশাপাশি বছরে বিপুল পরিমাণ মিঠাপানির মাছ উৎপাদন হচ্ছে এখানে। কিছু ব্যবসায়ী বিচ্ছিন্নভাবে পুঁটিসহ মিঠাপানির মাছ শুঁটকি করে ভারতে রফতানি করছেন। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-মে পর্যন্ত বাজারে প্রচুর পরিমাণে মিঠাপানির মাছ পাওয়া যায়, যা বছরের অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক সাশ্রয় দামে বিক্রি হয়। ওই সময় এসব মাছ শুঁটকি করে বিক্রি করতে পারলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। শুঁটকি উৎপাদনে এগিয়ে আসতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের সরকারিভাবে সহযোগিতাও করা হবে।’বর্তমানে সাতক্ষীরা সহ দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় মিঠা পানির মাছের এ শুটকি মাছ।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে