জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে দিয়েছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের মাসিক খাদ্য বরাদ্দ জনপ্রতি সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে কক্সবাজার ও ভাসানচরে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর খাদ্য সংকট আরও তীব্র হবে, যা স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ডব্লিউএফপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তহবিল সংকটের কারণে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করলেও পর্যাপ্ত দাতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, "রোহিঙ্গারা আগে থেকেই মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। নতুন করে বরাদ্দ কমে গেলে তাদের মৌলিক চাহিদা মেটানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে।"
খাদ্য সহায়তা কমে যাওয়ার ফলে সরাসরি রোহিঙ্গাদের পুষ্টি ঘাটতি, শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার বৃদ্ধি এবং শিবিরে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। ২০২৩ সালে যখন রেশন কমিয়ে ৮ ডলারে নামানো হয়েছিল, তখনও ক্ষুধা ও অপুষ্টির হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গিয়েছিল।
বিশ্লেষকদের ধারণা, এই সংকটের পেছনে অন্যতম কারণ যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল সংকোচন। ডব্লিউএফপির তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার প্রায় ৫০ শতাংশই আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র তাদের বৈশ্বিক সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করায় এই খাদ্য সংকট আরও তীব্র হয়েছে। যদিও মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি খাদ্য সহায়তা বন্ধের কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, তবুও জাতিসংঘের সংস্থাগুলো তহবিল সংকটের আশঙ্কায় রেশন কমানোর মতো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।
খাদ্য সহায়তা কমে গেলে রোহিঙ্গাদের জীবনধারণ আরও কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে তারা কাজের সন্ধানে ক্যাম্পের বাইরে বের হতে বাধ্য হতে পারেন, যা স্থানীয় জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
কক্সবাজারে একটি মানবিক প্রকল্পে কাজ করা এনজিওকর্মী জসিম উদ্দীন বলেন, "খাদ্য সংকট রোহিঙ্গাদের অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে। মানব পাচার, মাদক ব্যবসা এবং অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।"
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের উচিত দ্রুত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করে বিকল্প তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া।
ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ রোহিঙ্গাদের জন্য ৮১ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। বর্তমানে প্রতি মাসে ১৫ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন, যা সংগ্রহ করতে না পারলে খাদ্য সহায়তা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি দ্রুত এই সংকট নিরসনে এগিয়ে না আসে, তবে রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয় আরও তীব্র হতে পারে।