হাঁস-মুরগী ও ছাগল পালন করে সাবলম্বী হচ্ছেন নাগেশ্বরী প্রান্তিক নারীরা

এফএনএস (হাফিজুর রহমান হৃদয়; নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম) :
| আপডেট: ৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম | প্রকাশ: ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০১:২৪ এএম
হাঁস-মুরগী ও ছাগল পালন করে সাবলম্বী হচ্ছেন নাগেশ্বরী প্রান্তিক নারীরা

গেলো ৫ বছর আগে স্বামীর মৃত্যু হয় লাভলী বেগমের। অভাবের সংসারে স্বামীই ছিলো একমাত্র ভরসার জায়গা। তার আয়েই কোনোমতে চলতো সংসার। স্বামী বিদায়ে ছোট্ট ২ সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন তিনি। দুর্ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে শুরু হয় জীবনযুদ্ধ। এক ছেলে ও এক মেয়ের লেখাপড়া করানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটে তার। গল্পটি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের মৃত আমিনুল ইসলামের স্ত্রীর। স্বামীর বিয়োগে দুই সন্তানকে বুকে নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন তিনি। কিন্তু এই সন্তানদের মানুষ করবেন কীভাবে এমন দুশ্চিন্তা তাড়া করে তাকে। এমন সময় প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহযোগিতায় মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতির আওতায় চাইল্ড নট ব্রাইড প্রকল্প চালু হলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক নারীদের জীবনমান উন্নয়নে শুরু হয় গরু ছাগল, হাঁস মুরগী পালন, সবজি চাষসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ। পরে সেখান থেকে প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন এই সংগ্রামী নারী। প্রশিক্ষণ শেষে সেখান থেকে ১৭ হাজার টাকা পেয়ে একটি ছাগল ও কয়েকটি হাঁস-মুরগী কেনেন তিনি। এই ছাগল ও হাঁস মুরগী পালন করে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এর পরিধি। হাঁস মুরগীর ডিম বিক্রি করে সন্তানদের পড়ালোখা ও কোনোমতে সংসারের খরচ চালান তিনি। মাঝে মাঝেই ছাগল ও হাঁস মুরগী বিক্রি ও ডিমি বিক্রির মাধ্যমে এখন তার সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে বলে জানান মোহছেনা বেগম। 

তিনি জানান, এক সময় খুব অভাবের তাড়নায় ঠিকমতো দু-তিনবেলা খাবার জুটতো না তাদের। দুই ছেলে মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার মতো সাহস করেননি তিনি। বাবা হারা এই সন্তানদুটোর মুখের দিকে চেয়ে তাদেরকে বুকে আগলে রাখার প্রত্যয়ে মহিদেব যুব সমাজ কল্যান সমিতির বিভিন্ন মিটিং-এ অংশ নিয়ে সেখান থেকে কিছু সম্মানি আর তাদের এককালীন দেয়া ১৭ হাজার টাকায় শুরু করেন ছাগল ও হাঁস মুরগী পালন। এখন সাবলম্বী তারা।

এদিকে একইভাবে অভাবের সংসারে জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন ভিতরবন্দ ইউনিয়নের দোয়ালীপাড়া গ্রামের দিনমজুর জাহের আলীর স্ত্রী মোহছেনা বেগম। স্বামী দিনমজুরীর কাজ করলেও সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো তাদের। দুই মেয়ে ও এক ছেলের লেখাপড়া নিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটে তাদের। পরে অভাবের তারণায় বড় মেয়ে জেসমিন নাহার জান্নাতিকে বিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন তারা। কিন্তু তাদের মেয়ে বিয়ে না করে লেখাপড়া করতে চায়। দেশ সেবায় হতে চায় পুলিশ। কিন্তু লেখাপড়ার খরচ যোগানোর মতো সামর্থ্য তাদের নেই। পরে মা, মেয়ে মিলে মহিদেবের সিএনবি প্রকল্প থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তারা। এখন বাল্যবিয়ে নিয়ে কাজ করছে মেয়ে জান্নাতি। এছাড়াও টিউশনি করিয়ে নিজের ও অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট বোন ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনার খরচ যোগায় সে। অপরদিকে প্রকল্প থেকে মা মোহছেনা বেগম ১৭ হাজার টাকা সহযোগিতা পেয়ে শুরু করেন ছাগল, হাঁস-মুরগী পালন, সবজি চাষ ও বৃক্ষ রোপন। এভাবেই ফিরে আসে তাদের সংসারের সচ্ছলতা। 

মহিদেব যুব সমাজকল্যাণ সমিতির ইয়ুথলিড টেকনিক্যাল অফিসার ইলিয়াস আলী বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের অসচ্ছল নারী ও কিশোরীদের জীবনমান উন্নয়নে আমরা প্রকল্পের মাধ্যমে তাদেরকে বিভিন্ন মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে অর্থ সহায়তাও দিয়ে থাকি যাতে তারা মাধ্যমে সাবলম্বী হতে পারে। আমরা চাই নারীরা এগিয়ে গেলে দেশ এগিয়ে যাবে। দেশের উন্নয়ন হবে। 


আপনার জেলার সংবাদ পড়তে