চট্টগ্রামে ওয়াসার প্রধান সরবরাহ লাইনে ফাটল ধরার ফলে নগরীর বিশাল অংশজুড়ে পানি সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক দিন ধরে পানির অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো মানুষ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দ্রুত মেরামতের কাজ চলছে এবং শিগগিরই পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
জানা যায়, নগরীর অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কের অনন্যা আবাসিকসংলগ্ন এলাকায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় কালভার্ট নির্মাণের সময় ওয়াসার ৪৮ ইঞ্চি ব্যাসের প্রধান পাইপলাইনে ফাটল দেখা দেয়। সোমবার বিকেলে এই পাইপ ফেটে যাওয়ার পর থেকেই নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
অন্যদিকে, পাহাড়তলী সাগরিকা মোড়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) পরিচালিত বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন প্রকল্পের কাজের সময়ও ওয়াসার একটি বড় পাইপলাইনে ফাটল দেখা দেয়। এর ফলে চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে পানির সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
পাইপ ফেটে যাওয়ার ফলে নগরীর উত্তর ও দক্ষিণ হালিশহর, আগ্রাবাদ, নয়াবাজার, মাদারবাড়ী, দেওয়ানহাট, ধনিয়ালাপাড়া, লালখানবাজার, ওয়াসার মোড়, জিইসি মোড়, বায়েজিদ বোস্তামী, নাসিরাবাদ, অক্সিজেনসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
সরকারি পানি সরবরাহ সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, হালিশহর এলিভেটেড ট্যাঙ্ক, সিডিএ আবাসিক এলাকা, পশ্চিম মাদারবাড়ি, বড়পুল, ছোটপুল, বেপারিপাড়া, গোসাইলডাঙ্গা, পানওয়ালাপাড়া, পোস্তারপাড়, কদমতলী, হাজিপাড়া, শান্তিবাগ, মুহুরিপাড়া, ঈদগাহ এবং দেওয়ানহাট এলাকাগুলোতে পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় অনেকেই বোতলজাত ও জারের পানি কিনে দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। তবে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে বাজারে পানির সংকটও তৈরি হয়েছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ যেমন—খাবার রান্না, কাপড় ধোয়া ও গোসল করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রানা চৌধুরী জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পাইপলাইন মেরামতের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, "আমাদের দল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি, বৃহস্পতিবারের মধ্যেই পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।" তবে পাহাড়তলীর পাইপলাইন মেরামতে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহাবুবুল আলম।
এটি নতুন ঘটনা নয়। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চউকের খাল খনন প্রকল্পের সময় ওয়াসার আরেকটি পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, যার ফলে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নগরবাসী পানি সংকটে ভুগেছিল। এক মাসের ব্যবধানে আবারও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থার নাজুক অবস্থাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।