২০ দিন পরও হয়নি মামলা!

শিশু মিমকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা, দাবী পরিবার ও গ্রামবাসীর

এফএনএস (মাহবুব খান বাবুল; সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : | প্রকাশ: ১০ মার্চ, ২০২৫, ০২:০৩ পিএম
শিশু মিমকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা, দাবী পরিবার ও গ্রামবাসীর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের কালিশিমুল গ্রামের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী শিশু খাদিজা (০৬) প্রকাশ মীমকে দুই আনা স্বর্ণের জন্য পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জোর দাবী জানিয়ে যাচ্ছেন পরিবার স্বজন ও গ্রামবাসী। ১১ দিন ঘুরিয়ে দেয়া পুলিশের প্রতিবেদনকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট বলছেন মীমের স্বজন ছানা উল্লাহ। রহস্যজনক কারণে মুখে হত্যাকান্ড বলেও ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে বারবার নিস্পত্তির প্রস্তাব দিচ্ছেন কতিপয় সালিসকারক। তদন্তকারী কর্মকর্তা শুরূ থেকে পানিতে ডুবে স্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বললেও ওসি বলছেন মীমের পেটে পানি না থাকায় সন্দেহ হচ্ছে। একাধিকবার চেষ্টায় থানা মামলা না নেয়ায় গত ২৫ ফেব্রূয়ারি আদালতে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন মীমের পিতা আলী ইসলাম। আদালত এ বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়ে গত ২৬ ফেব্রূয়ারি পত্র দিয়েছেন সরাইল থানাকে। ১১ দিন পর গতকাল রোববার আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন এস আই জাহিদ হাসান।  

পুলিশ, সরজমিন অনুসন্ধান ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শিশু মীম নিহতের ঘটনায় নানা ধরণের তথ্য বেরিয়ে আসছে। মীমের পরিবার স্বজন ও গ্রামবাসীর দাবী মীমকে দেড় আনা স্বর্ণের জন্য পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে জান্নাত ও তার পিতা চাচারা। প্রথমে পরিত্যাক্ত একটি ঘরে মাটি চাপা ও পরে কৌশলে পুকুর পাড়ে মীমের লাশ ফেলে রেখেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা শুরূ থেকেই পানিতে ডুবে মৃত্যুর কথা বললেও পিও ভিজিটের পর অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলছেন মীমের পেটে পানি না থাকায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পর থেকে জান্নাত তার পিতা আনসর আলী ও চাচা মনসর আলীসহ সকলেই বসতঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে গেছে। পলাতক থেকে তারা গ্রামের একাধিক সালিসকারকের কাছে ঘটনাটি আপোষ নিস্পত্তি করে দেয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন। সালিসকারক মো. এতিম হোসেন এক জায়গায় বলেই ফেলেছেন, ঘটনার পর আনসর আলী তার বাড়িতে রাত্রিযাপন করতে গিয়েছিল। বিছানায় শুয়ে মীমকে জান্নাত খুন করার বিষয়টি স্বীকার করেছে আনসর। বাদী পক্ষ রাজি থাকলে তিনি প্রয়োজনে কয়েক গ্রামের সর্দার নিয়ে বিষয়টি নিস্পত্তি করতে চান। বিষয়টি নিস্পত্তির কথা ওসির টেবিলেও বলেছেন এতিম হোসেন। ৫ নং ওয়ার্ড কালিশিমুলের সাবেক ইউপি সদস্য মো. দানা মিয়াসহ গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন, জান্নাত মেয়েটা খুবই খারাপ। স্বর্ণ দেখলে মেয়েটা পাগল হয়ে যায়। আমি নিজে তার স্বর্ণ চুরির বেশ কয়েকটি সালিস করেছি। এক জায়গা থেকে ৬ আনা আরেক জায়গা ৩ আনা স্বর্ণ চুরি করেছিল। জরিমানাও দিয়েছে। শিশু মীমকে জান্নাত ও তার পরিবারের লোকজন পরিকল্পিত ভাবে মাত্র দেড় আনা স্বর্ণের জন্য খুন করেছে। তাদের স্বজনরাই বিভিন্ন জায়গায় হত্যার কথা স্বীকার করছেন। মীমকে জান্নাতদের রান্না ঘরে মেরেছে। হত্যাকান্ডের পর জান্নাত তার নানার বাড়ি অরূয়াইলের বারপাইকায় আশ্রয় নিয়েছে। সেখানেও জান্নাত তিনটি মুঠোফোন সেট চুরি করেছে। ফলে সেখান থেকে তাড়িয়েছে। জান্নাতকে ধরে জিজ্ঞেস করলে সকল সত্য বেরিয়ে আসবে। এটা হচ্ছে না কেন? বুঝতে পারছি না। মীমের পরিবার গরীব বলে কী হত্যার বিচার পাবে না? মীমের পিতা আলী ইসলাম ও স্বজন ছানা উল্লাহ বলেন, আমরা মীমের লাশ উদ্ধারের পর থেকে হত্যাকান্ড বলে আসছি। কিন্তু আমাদের কথাকে পাত্তাই দিচ্ছেন না পুলিশ। মামলা করার জন্য অগণিত বার থানায় গিয়েছি। উনারা শুধু সকাল বিকাল বলে ঘুরিয়েছেন। জাহিদ স্যার থানায় কেন যায়? জিজ্ঞেস করে আমাদেরকে ধমক দিয়েছেন। মীম হত্যায় অভিযুক্তদের কতিপয় লোককে জাহিদ স্যারের সাথে কথা বলতে দেখেছি। অপারগ হয়ে ঘটনার ৫দিন পর গত ২৫ ফেব্রূয়ারি আদালতে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি। আদালত সরাইল থানার কাছে এ বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়েছেন। প্রতিবেদনের জন্যও থানায় ৮-১০ দিন ঘুরেছি। জাহিদ স্যার আমাদেরকে পাত্তাই দেননি। অবশেষে ১১ দিন পর গতকাল আদালতে মিথ্যা একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। ঘটনা পর ছানা উল্লাহর মুঠোফোন থেকে ফোন করে প্রথমে এস আই রহমান স্যারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। রহমান স্যার উনাকে (জাহিদ স্যারকে) জানিয়েছেন। আর তিনি প্রতিবেদনে লিখেছেন ৯৯৯ থেকে ফোন দেয়া হয়েছে। সুযোগে অভিযুক্তরা এখন প্রকাশ্যে গ্রামে ঘুরছে। আমরা গরীব ও দূর্বল বলে শিশু মীমকে নির্মম ভাবে হত্যার বিচার মনে হয় আমরা পাব না। এস আই জাহিদ হাসান বলেন, আমার বিরূদ্ধে আনীত তাদের সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি অভিযুক্তদের কোন স্বজন বা লোকের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা দেখাও করিনি। আদালত আমাকে আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় দিয়েছেন। আর তারা (বাদী পক্ষ) পাগল হয়ে গেছেন। বিভিন্ন ধরণের লোক ও সাংবাদিক দিয়ে তারা আমাকে ফোন করাচ্ছেন। আমি ওসি স্যারের সাথে কথা বলে আজকে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিয়েছি। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন না পেয়ে নিহতের মূল কারণ বলা যাবে না। 

প্রসঙ্গত: গত ১৯ ফেব্রূয়ারি দুপুরে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে শিশু মীম। ভাত খাওয়ার পর খেলার কথা বলে মীমকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায় প্রতিবেশী জান্নাত নামের একটি মেয়ে। দুপুর পেরিয়ে বিকাল মীম বাড়ি ফিরেনি। সন্ধ্যার পর মাইকিং ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মীমের সন্ধান চেয়েও সুফল মিলেনি। পরের দিন বাড়ি সংলগ্ন রাস্তা ঘেষা পুকুর পাড়ে মিলে মীমের লাশ। পানিতে ডুবে মৃত্যুর প্রচারণা চালাতে থাকে। অথচ মীমের পেটে পানি ছিল না। কিন্তু মীমের পিতা মাতা স্বজন ও গ্রামবাসী বলে আসছেন এটা হত্যাকান্ড।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে