সরকার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০০৩ সালে তাঁকে মরণোত্তর এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল, যা ২০১৬ সালে বাতিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পুরস্কার বাতিলের কোনো নির্দেশনা না থাকায় এবং মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য অবদানের কথা বিবেচনা করে সরকার এই সিদ্ধান্ত রহিত করেছে। তবে এ বছরের চূড়ান্ত তালিকায় মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানীর নাম নেই। এর আগে সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছিল এবার স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকায় এম এ জি ওসমানীর নাম আছে।
এছাড়া, ২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য সাত বিশিষ্ট ব্যক্তিকে মনোনীত করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
২০০৩ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়। তবে ২০১৬ সালে সরকার এই পুরস্কার বাতিল করে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিলের কোনো নির্দেশনা না থাকায় এবং মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসাধারণ অবদানের কথা বিবেচনা করে সরকার পুরস্কার বাতিলের সিদ্ধান্ত রহিত করেছে।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবার সাত বিশিষ্ট ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছয়জন মরণোত্তর এই পুরস্কার পাচ্ছেন। মনোনীত ব্যক্তিরা হলেন:
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর)
সাহিত্য: মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ, ওরফে কবি আল মাহমুদ (মরণোত্তর)
সংস্কৃতি: নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), যিনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অন্যতম নকশাকার।
সমাজসেবা: স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা।
মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতি: মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান, ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), বাংলাদেশের পপসংগীতের অগ্রপথিক।
শিক্ষা ও গবেষণা: বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর, বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী।
প্রতিবাদী তারুণ্য: আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী, যিনি ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে নিহত হন।
এবারের চূড়ান্ত তালিকায় মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানীর নাম নেই। আগে কিছু সরকারি সূত্রে বলা হয়েছিল, তাঁর নামও স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে সূত্র বলছে, এম এ জি ওসমানী ১৯৮৫ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছিলেন এবং দ্বিতীয়বার কাউকে এই পুরস্কার দেওয়া হয় না। এই কারণে, তাঁর নাম চূড়ান্ত তালিকায় রাখা হয়নি।
২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ার পর বদরুদ্দীন উমর একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানান, তিনি এই পুরস্কার গ্রহণ করবেন না। তিনি বলেন, "১৯৭৩ সাল থেকে আমাকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমি সেগুলোর কোনোটি গ্রহণ করিনি। এখন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু তাদের দেওয়া এই পুরস্কারও গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।"
১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে সরকার এই পুরস্কার দিয়ে আসছে। পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে পাঁচ লাখ টাকা, একটি স্বর্ণপদক, পদকের একটি রেপ্লিকা এবং একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়। এবারের পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে ছয়জনই মরণোত্তর পুরস্কার পাচ্ছেন।