যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা করলেও ইরানের ওপর থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি বলেন, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাইত, তবে যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই তা ঠেকিয়ে রাখতে পারত না।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাঠানো চিঠি প্রত্যাখ্যান করেছেন আয়াতুল্লাহ খামেনি। ট্রাম্প গত সপ্তাহে জানান, তিনি খামেনিকে একটি চিঠি পাঠিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। পরে সেই চিঠিটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির কাছে হস্তান্তর করেন।
এদিকে, ইরানি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, খামেনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখনই আরাকচি ও গারগাশের মধ্যে বৈঠক চলছিল। খামেনি ট্রাম্পের আলোচনার প্রস্তাবকে ‘এক ধরনের প্রতারণা’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করা।
তিনি বলেন, "আমরা জানি, তারা এই আলোচনার কোনো গুরুত্ব দেবে না। তাহলে আলোচনার অর্থ কী? যুক্তরাষ্ট্রের এই আমন্ত্রণ জনমতকে বিভ্রান্ত করার একটি চালবাজি মাত্র।" পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, "ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করলে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর হবে এবং ইরানের ওপর চাপ আরও বাড়বে। তাদের দাবি-দাওয়া অযৌক্তিক ও অতিরঞ্জিত।"
এদিকে, ফক্স বিজনেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, "ইরানকে দুটি উপায়ে সামলানো যেতে পারে—একটি সামরিকভাবে, অন্যটি এমন একটি চুক্তির মাধ্যমে, যা তাদের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন ঠেকাতে পারবে।"
তবে তেহরান বরাবরই বলে আসছে যে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না। তবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইরান দ্রুত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে নিচ্ছে, যা প্রায় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি। এটি অস্ত্র-উপযোগী ইউরেনিয়াম হিসেবে বিবেচিত হয়।
২০১৯ সাল থেকে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচির গতি বাড়িয়েছে। এর এক বছর আগে, তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৫ সালের বহুপাক্ষিক পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন এবং তেহরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন, যা ইরানের অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।