মাগুরার শিশু ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচার আগামী সাত দিনের মধ্যে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেলে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
আইন উপদেষ্টা জানান, শিশুটির ময়নাতদন্ত ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ মামলায় মোট ১২ থেকে ১৩ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে এবং রবিবারের মধ্যেই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধনী অধ্যাদেশ জারি করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
গত ৬ মার্চ মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। পরবর্তীতে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতাল, এরপর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। ৮ মার্চ সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুর ১টায় শিশুটি মৃত্যুবরণ করে।
আইএসপিআর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, শিশুটির অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছেন, তবে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পর তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
শিশুটির মা গত ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্তরা হলেন—শিশুটির ভগ্নিপতি সজীব হোসেন (১৮), তার বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), সজীব শেখের অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাই (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগম (৪০)। ইতোমধ্যে চার আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে তিনজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকালে মাগুরা থেকে ঢাকায় সিআইডির ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবে এসব নমুনা জমা দেওয়া হয়।
মাগুরার এই নৃশংস ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং সাধারণ জনগণ দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘সরকার এ ঘটনায় কালক্ষেপণ করেনি। দ্রুত সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং যথাযথ তদন্ত চলছে। ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোনো অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়েও সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।’
সরকারের শীর্ষ মহল থেকে জানানো হয়েছে, এই নৃশংস ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।