ভারতে হোলি উৎসবের আগে বিভিন্ন মসজিদ ঢেকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তরপ্রদেশের প্রশাসন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে নেওয়া এই পদক্ষেপ নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, দুই সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে সংঘাত এড়াতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তবে বিরোধীরা এটিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ বলে অভিযোগ তুলেছেন।
আগামী ১৪ মার্চ ভারতজুড়ে পালিত হবে হোলি উৎসব। উত্তরপ্রদেশের সম্ভাল জেলার পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, হোলির শোভাযাত্রার পথে অবস্থিত ১০টি মসজিদ, যার মধ্যে ঐতিহাসিক জামা মসজিদও রয়েছে, সেগুলো প্লাস্টিক শিট এবং ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে প্রশাসনের যুক্তি হলো, হোলির সময় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করা।
সম্ভালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) শ্রীশ চন্দ্র বলেছেন, “এই সিদ্ধান্ত দুই সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব উদযাপনের স্বার্থেই এই পদক্ষেপ।” সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট বন্দনা মিশ্র জানিয়েছেন, “জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন মসজিদে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং পুরো অঞ্চলকে সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে।”
প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতোমধ্যেই বিতর্ক দেখা দিয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন, “হোলি উৎসবের সময় মুসলিমদের ধর্মীয় স্থাপনাগুলো ঢেকে দেওয়া মানেই তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।” তাদের অভিযোগ, প্রশাসন পরিকল্পিতভাবে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করছে।
উত্তরপ্রদেশের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা অনুজ কুমার চৌধুরী সম্প্রতি বিতর্কিত মন্তব্য করে বলেছেন, “হোলি বছরে একবার আসে, আর জুমার নামাজ প্রতি বছর ৫২ বার পড়া হয়। মুসলিমদের উচিত হোলির সময় ঘরে থাকা, যাতে তাদের গায়ে রঙ না লাগে।” তার এই মন্তব্যের সমর্থন জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
বিজেপি নেতা রঘুরাজ সিং মুসলিম পুরুষদের উদ্দেশে বলেন, “হোলির সময় রঙের সমস্যা এড়াতে তাদের ত্রিপল দিয়ে তৈরি হিজাব পরা উচিত।” এই ধরনের মন্তব্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে হোলির আগে সম্ভাল জেলায় ব্যাপক ধরপাকড় চালানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অন্তত ১,০১৫ জনকে আটক করা হয়েছে এবং ৬০টির বেশি মসজিদে ত্রিপল ঢেকে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, এটি শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য করা হয়েছে, তবে বিরোধীরা বলছেন, এটি মুসলিমদের আতঙ্কিত করার একটি কৌশল।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তরপ্রদেশে মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক দমন-পীড়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। হোলির আগে গণআটক ও মসজিদের ওপর ত্রিপল চাপিয়ে দেওয়ার ঘটনাও সেই ধারাবাহিক নীতির অংশ। স্থানীয় মুসলিমদের অভিযোগ, প্রশাসন পরিকল্পিতভাবে হোলিকে ব্যবহার করে তাদের ধর্মীয় অধিকার খর্ব করছে এবং ভীতি প্রদর্শন করছে।