সেনাবাহিনী সংক্রান্ত ফেসবুক স্ট্যাটাস: সারজিসের ব্যাখ্যা ও দ্বিমত

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২৩ মার্চ, ২০২৫, ০৫:১৩ পিএম
সেনাবাহিনী সংক্রান্ত ফেসবুক স্ট্যাটাস: সারজিসের ব্যাখ্যা ও দ্বিমত
ফাইল ছবি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা সেনাবাহিনীকে ঘিরে প্রকাশিত এক ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ সম্প্রতি সেনাপ্রধানের সঙ্গে তাদের দলের বৈঠক নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন, যা পরবর্তীতে দলের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের জন্ম দেয়। এ বিষয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

হাসনাতের ফেসবুক স্ট্যাটাস ও প্রতিক্রিয়া
গত ২১ মার্চ, সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের ১০ দিন পর, হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে এক স্ট্যাটাস দেন, যেখানে সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হয়। তিনি উল্লেখ করেন যে, সেনাবাহিনী ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

হাসনাতের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ২৩ মার্চ তার নিজস্ব ফেসবুক পোস্টে দ্বিমত প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, হাসনাতের বর্ণনা বাস্তবতাকে পুরোপুরি প্রতিফলিত করে না এবং এটি কিছুটা অতিরঞ্জিত হয়েছে।

সারজিসের ব্যাখ্যা ও দ্বিমত
সারজিস আলম তার পোস্টে স্পষ্ট করেন যে, সেনাপ্রধানের সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ অনানুষ্ঠানিক ছিল এবং এটি সরাসরি কোনো রাজনৈতিক চুক্তির অংশ ছিল না। তিনি বলেন, “আমাদের সঙ্গে সেনাপ্রধানের মিলিটারি অ্যাডভাইজারের পূর্বে যোগাযোগ ছিল এবং সেনাপ্রধান আমাদের ডেকে নেননি বরং আমরা তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করি।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, আলোচনায় ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’, সাবের হোসেন, শিরীন শারমিন চৌধুরী, সোহেল তাজসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এলেও, তা কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের অংশ ছিল না। সারজিসের ভাষায়, “যেভাবে হাসনাত তার পোস্টে আলোচনা উপস্থাপন করেছে, বাস্তবে তা এতটা ‘এক্সট্রিম’ ছিল না। তবে সেনাপ্রধান অনেক বেশি স্পষ্টভাষী এবং আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।”

বিতর্কিত বক্তব্য ও সেনাপ্রধানের প্রতিক্রিয়া
হাসনাত তার পোস্টে উল্লেখ করেন যে, বৈঠকের এক পর্যায়ে তিনি সেনাপ্রধানকে জিজ্ঞাসা করেন, “যে দল এখনও ক্ষমা চায়নি বা অপরাধ স্বীকার করেনি, তাদের কীভাবে ক্ষমা করা যায়?” জবাবে সেনাপ্রধান কিছুটা কঠোরভাবে বলেন, “ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স।”

তবে, সারজিস এই কথোপকথনকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, “সেনাপ্রধান রেগে গিয়েছিলেন বলে আমার মনে হয়নি। বরং এটি ছিল একজন সিনিয়র ব্যক্তি জুনিয়রদের অভিজ্ঞতার দিক থেকে উপদেশ দেওয়ার মতো।”

দলীয় সমন্বয় 
সারজিস আলম মনে করেন, এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা দলের অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল, ফেসবুকে প্রকাশ করাটা সঠিক পদ্ধতি ছিল না। তিনি বলেন, “আমাদের আলোচনার বিষয়গুলো যদি দলের ফোরামে উত্থাপন করা হতো, তাহলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম।”

তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাজনৈতিক দলের যোগাযোগের একটি নির্দিষ্ট গোপনীয়তা বজায় রাখা উচিত, যা এই ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ব্যাহত হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে যেকোনো সংলাপে এনসিপির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে