৩১ বছর পর সন্তানের খোঁজ পেলেন বৃদ্ধ মা

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) :
| আপডেট: ৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম | প্রকাশ: ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৩:৫১ এএম
৩১ বছর পর সন্তানের খোঁজ পেলেন বৃদ্ধ মা

জীবিকার তাগিদে মালয়েশিয়া গিয়ে দীর্ঘ ৩১ বছর যাবৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেন মিয়ার ছেলে সান্টু মিয়া। মালয়েশিয়া থাকাবস্থায় প্রবাসী মেয়েকে বিয়ের পর সান্টু মিয়ার দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী ও এক পুত্র সন্তান নিয়ে প্রবাসে ছিল সুখের সংসার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মানসিক ভারসাম্য হারানো সান্টু মিয়া এখন মালয়েশিয়ার শহরে ভবঘুরে হিসেবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পায় তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করছেন ভবঘুরে হিসেবে। দীর্ঘদিনেও সান্টু মিয়ার কোন খোঁজ পায়নি বাংলাদেশে থাকা তার পরিবারের লোকজন। অতিসম্প্রতি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর শহরের বুকিবিন্তান এলাকায় সান্টু মিয়াকে ভবঘুরে হিসেবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে একই উপজেলার এক যুবক ভিডিও ধারন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিলে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয় দেশে থাকা তার পরিবারের সদস্যদের মাঝে। ওই ভিডিও দেখে গ্রামের বাড়িতে থাকা সান্টু মিয়ার শতবর্ষী মা মেরেজান বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। মৃত্যুর আগে ছেলেকে এক নজর দেখার জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সান্টু মিয়ার বৃদ্ধা মা মেরেজান বেগম বলেন, গত দুইদিন পূর্বে এলাকার এক যুবক তাকে ফেসবুকে তার ছেলের একটি ভিডিও দেখিয়েছেন। ফেসবুকে নিখোঁজ ছেলের করুন ভিডিও দেখে অস্থীর হয়ে উঠেছেন বৃদ্ধা মেরেজান বেগম। ভিডিও’র সূত্রধরে মালেশিয়ায় অবস্থানরত ফেসবুকে ভিডিওর পোস্টদাতা বাংলাদেশী যুবকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিন পূর্বে মালেশিয়ার কুয়ালামপুর শহরের বুকিবিন্তান এলাকার মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ভবঘুরে সান্টু মিয়াকে দেখতে পাওয়া যায়। এসময় তিনি (সান্টু বলেছেন) তিনি দুইদিন পর্যন্ত কিছু খায়নি। পরবর্তীতে তিনি একটি ভিডিও ধারন করে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। ওই যুবক আরও জানান, পাসপোর্ট না থাকার কারনে মালয়েশিয়া সরকার শরনার্থীদের জন্য করা ইউএন কার্ডে তার সান্টু মিয়ার নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যেকারণে দেশে আসার জন্য বিমান বন্দরে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় ইউএন কার্ডে সান্টু মিয়ার নাম থাকার সে দেশে আসতে পারছেন না। এজন্য বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এ ব্যাপারে সোমবার দুপুরে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারিহা তানজিন বলেন, মালেশিয়ায় অবস্থানরত ভবঘুরে সান্টু মিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জীবিকার তাগিদে ও সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ১৯৯৩ সালে একটি কোম্পানীতে ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান খাজুরিয়া গ্রামের আবুল হোসেন মিয়ার ছেলে সান্টু মিয়া। কোম্পানীতে কাজ করে গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠানোসহ নিয়মিত যোগাযোগ রাখলেও কিছুদিন পর বিদেশী এক মেয়েকে বিয়ে করে সুখে সংসার করছিলেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। এর কিছুদিন পর তার স্ত্রীর ভাইয়েরা মাদক সেবন করার অভিযোগ এনে সান্টু মিয়াকে বেধম মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেয়। এমনকি কোম্পানীর চাকরি হারায় সান্টু। প্রথম যে কোম্পানীর ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন ওই কোম্পানি কাছে তার (সান্টু) পাসপোর্ট জমা থাকায় নতুন করে অন্য কোন কোম্পানিতে কাজে যোগদান করতে পারেনি সান্টু মিয়া। মালয়েশিয়ায় একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে সান্টু মিয়া কারাভোগও করেছেন। এরপরেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন সান্টু মিয়া। শুরু হয় ভবঘুরে জীবন যাপন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বাংলাদেশে থাকা পরিবারের লোকজনের সাথে তার যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যায়। উল্লেখ্য, পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সান্টু মিয়া তৃতীয় সন্তান। পিতা আবুল হোসেন মিয়া ও সান্টুর ছোট বোন ববিতা আক্তার ২০০৩ সালে ঢাকা-বরিশাল লঞ্চ ডুবিতে মৃত্যুবরণ করেছেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে