পীরগঞ্জের বালু চরে ভুট্টা কাটা মাড়াইয়ে ব্যাস্ত চাষিরা

এফএনএস (মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান; পীরগঞ্জ, রংপুর) : | প্রকাশ: ৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম
পীরগঞ্জের বালু চরে ভুট্টা কাটা মাড়াইয়ে ব্যাস্ত চাষিরা

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে চলতি মওসুমে ভুট্টার বাম্পার আবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ ভাল। চাষিরা নতুন ভুট্টা আহরন ও মাড়াইয়ে তাই ব্যাস্ত সময় পার করছেন। ধান-ভুট্টা ও সবজির জন্য খ্যাত এই উপজেলার করতোয়া নদীর দু’ধারের বালু চর। ওইসব এলাকায় দিগস্ত বিস্তৃত শুধু ভুট্টা আর ভুট্টার ক্ষেত। চলতি মৌসুমেও লক্ষ্যমাত্রার চাইতে অধিক পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো হয়েছে। অনুকূলে আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় স্বল্প খরচে যথাসময়ে কৃষকরা এবার ভুট্টা মাড়াই শুরু করেছেন। খরচ কম হওয়ায় এ বছর  ভুট্টার চাষে কৃষকরা বেশি ঝুঁকে পড়ছেন। মৌসুমের শুরুতেই নতুন ভুট্টার ক্রেতা কম দামও কম বলে কৃষকরা আক্ষেপ করে বলছেন। ভালো ফলনের আশায় উপজেলার কৃষকরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী চলতি মওসুমে ৮ হাজার ২ শত  হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। একটি পৌরসভা এবং ১৫ টি ইউনিয়নে ৮’শ ৭০ জন কৃষককে বিনামূল্যে সার ও বীজ প্রণোদনা হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে।  উপজেলার করতোয়া নদীর চরাঞ্চলের অনেক চাষি বলছেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভ ও আবাদ পদ্ধতি সহজ হওয়ার কারণে কৃষকেরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।  চতরা ইউনিয়নের পার কুমারপুর গ্রামের ভুট্টা চাষি আব্দুল মমিন,সুজা মিয়া বলেন,গমের মতো ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে লাভ বেশি হয়, এতে পরিচর্যাও কম । চরে ভুট্টার ফলন বেশি হয় এবং মাড়াই প্রক্রিয়াও অনেক সহজ। এ ছাড়াও একই জমিতে সাথি ফসলও চাষ করা যায়। মূলত এসব সুবিধার কারণেই কৃষকরা ভুট্টা চাষে এখন বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। একই এলাকার অপর চাষি আজাহার আলী জানান, শীত মৌসুমের শুরুতেই এবং বালু চর থেকে পানি নেমে যাবার সাথে সাথেই অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ভুট্টার বীজ রোপণ করা হয় আলুর জমিতে। মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ভুট্টা ঘরে ওঠে। চর এলাকায় এখন রবি মৌসুমে বেশির ভাগ জমিতেই এখন ভুট্টার চাষ হচ্ছে। উপজেলার বাটিকামারী গ্রামের চাষি মোনাজ্জল হোসেন জানান, কিছুদিন আগে সব ধরনের ফসলের চাষাবাদ করা হতো। চর এঅকায় বালু মাটিতে অতিরিক্ত সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয়। আগাছা পরিস্কার করতে শ্রমিক খরচও বেশি হয়। এসব খরচ তুলামালক কম হওয়ায় এলাকার চাষিরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছে। চতরা হাটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আতিয়ার রহমান বলেন, সুবিধা মতো চাষিরা জমিতেই ভুট্টা মাড়াই করে থাকে। আমরা ভুট্টা কিনে চাতালে নিয়ে রোদ দিয়ে যাচাই-বাছাই করে মোকামে পাঠাই। কৃষকদের উৎপাদিত ভুট্টা প্রতি মন ৮’শ ৫০ টাকা থেকে ৮’শ  টাকায় কেনা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবসায়ীরা পুরোদমে ভুট্টা কিনতে মাঠে নেমে যাবে। তখন হয়তো বাজার আরও বেশি হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ সাদেকুজ্জামান বলেন-বর্তমানে অনেক কৃষক ভুট্টার সঙ্গে সাথি ফসলেরও চাষ করছেন। আলুর জন্য আগেই জমিতে সার দিয়ে থাকেন। ওই জমিতে ভুট্টা চাষে সার কম লাগে। আবার ভুট্টার বীজ রোপণের আগেই অনেকে লালশাক, মুলা বা ফুলকপির মতো সবজির বীজও রোপণ করেন। ভুট্টার চারা মোটামুটি বড় হতে হতে এসব সবজি তুলে নেয়া যায়। এভাবে অনেকেই অধিক লাভবান হচ্ছেন। এছাড়াও আমাদের কৃষি বিভাগের লোকজন মাঠে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে