২০০৯ সালের পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় আটক ২৩৯ জন বিডিআর সদস্যের জামিন শুনানির আদেশ আবারও পিছিয়ে আগামী ৮ মে ধার্য করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক শেখ তারিখ এজাজ এই নতুন দিন নির্ধারণ করেন। নির্ধারিত দিনে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জামিন শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও ট্রাইব্যুনালের নিয়মিত বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার অসুস্থতার কারণে আদালতে কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মো. বোরহান উদ্দিন এবং আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট পারভেজ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অ্যাডভোকেট পারভেজ হোসেন জানান, “আজ জামিন ও সাক্ষ্যগ্রহণের কথা থাকলেও বিচারক অনুপস্থিত থাকায় কোনো শুনানি হয়নি। এর আগেও কয়েকবার তারিখ পিছিয়েছে।”
এর আগে ১৩ মার্চ শুনানি শেষে ১৬ মার্চ আদেশের তারিখ ধার্য করা হয়। পরে সেটি পিছিয়ে ১৭ মার্চ করা হয়, এরপর আবারও পিছিয়ে ১০ এপ্রিল ধার্য করা হয়েছিল। সর্বশেষ তা আরও একবার পিছিয়ে ৮ মে নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে, এটি হবে জামিন শুনানির পঞ্চম দফা পেছানো।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে ভয়াবহ বিদ্রোহে নিহত হন ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা সহ মোট ৭৪ জন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।
ঘটনার পরপরই হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। হত্যা মামলায় মোট ৮৫০ জনের বিরুদ্ধে বিচার পরিচালনা করা হয়, যা শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। এতে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
পরবর্তীতে হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় দেন। রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়, ১৮৫ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন, এবং ২২৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ২৮৩ জন খালাস পান। এখন পর্যন্ত মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে ৫৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষও ৮৩ জনের খালাস ও সাজা হ্রাসের বিরুদ্ধে আপিল করেছে, যেগুলো এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
২০১০ সালে বিস্ফোরক আইনের অধীনে ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়। এই মামলা এখনও বিচারাধীন। এদিকে শহীদ সেনা পরিবারের সদস্যরা ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ নিয়ে যান।
সরকার এই ঘটনার পুনঃতদন্তের লক্ষ্যে গত ২৪ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে একটি কমিশন গঠন করে, যাকে ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।