যে কারণে অপরাধ বেড়েই চলছে!

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) : | প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:৪১ পিএম
যে কারণে অপরাধ বেড়েই চলছে!

বিভাগের ছয় জেলায় চুরি, ডাকাতি, দস্যুতা, খুন, অপহরণ, নীরব চাঁদাবাজি ও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে জমিজমার বিরোধ। থানা পুলিশের নীরব ভূমিকার কারণে এসব অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলছে বলে দাবি করেছেন সাধারণ মানুষ। তাদের দাবি, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এখনও তেমন একটা ভূমিকা রাখছেন না। যেকারণেই অপরাধ প্রবনতা বেড়েই চলেছে।

বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৪৮০টি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ছয় মাসে অপরাধ সংগঠিত হয়েছ ৫৮০টি। এরমধ্যে ৮১টি হত্যা, ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টা ১৪৬টি, অপহরণ ১৪টি, ডাকাতি ২৬টি, দস্যুতা ২১টি আর চুরির ঘটনা ঘটেছে ২৯২টি।

সচেতন নাগরিকদের মতে, বরিশাল নগরীর কাশীপুরের ইছাকাঠী এলাকায় দীঘি, পুকুর ও ডাস্টবিন থেকে এক নারীর শরীরের সাতটি অংশ উদ্ধার হলেও ভিকটিম এখনও চিহ্নিত হয়নি। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই উজিরপুরের শিকারপুরে ঘাট ইজারার দ্বন্ধে চাচাকে খুন করে নদীতে ডুবিয়ে দেয় ভাতিজা। এছাড়া গত দুই মাসে ঝালকাঠির বাউকাঠী বাজারের ব্যবসায়ী সুদেব হত্যা, গত ১২ এপ্রিল গৌরনদীতে জমিজমা বিরোধে ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর হামলায় ভাসুর ও অপর ঘটনায় হোসনাবাদ গ্রামের এক শিশু হত্যাকান্ডের শিকার, নগরীতে খুন হয়েছে এক যুবদল নেতা, বানারীপাড়ায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের আটক করতে না পারাসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশ তেমন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় অপরাধীরা অপরাধ সংঘটিত করতে উৎসাহী হচ্ছে। এছাড়াও দখল বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অপরাধের সাথে জড়িতরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় আইনের আশ্রয়ে যেতে সাহস পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। ফলে অনেক ঘটনা ধামাচাপা পরে যাচ্ছে।

বরিশালের মানবাধিকার কর্মী ও উন্নয়ন সংগঠক দীপু হাফিজুর রহমান বলেন, দেশে একটি গণ অভ্যুত্থান হয়েছে। নতুন বাংলাদেশে নতুন সরকার এসেছে। ৫ আগস্টের পর বেশ কয়েকদিন দেশে কোনো সরকার ছিলোনা। এছাড়া গণ অভ্যুত্থানের সময় নানা কর্মকান্ড নিয়ে কতিপয় পুলিশ অফিসারের নির্দেশে পুরো বাহিনী বিতর্কিত হয়ে পরে। এতে তারা তাদের মনবল হারিয়ে নিস্কিৃয় হয়ে পরেছে। এ সুযোগকে কাজের লাগিয়েছে অপরাধীরা।

তিনি আরও বলেন, এর থেকে উত্তরণের জন্য পুলিশের পাশে থেকে সহযোগিতা করে তাদের মনোবল বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে মব সৃষ্টি করা বন্ধ এবং পুলিশের বিরুদ্ধে মব সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনতে পারলে পুলিশের মনোবল বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। তা হলে অপরাধের সংখ্যা কমে আসবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, দিন দিন হত্যা, গুম, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজির মতো ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলছে। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বরিশালে সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গাজী জাহিদ হোসেন বলেন, পুলিশের মধ্যে এখনো গা ছাড়া ভাব দেখা যায়। তারা নিরপেক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের পাশে না দাঁড়ালে আগামী দিনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আরও পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও পুলিশের কাজে সহায়তা করতে হবে।

সার্বিক বিষয়ে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মঞ্জুর মোর্শেদ আলম বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর পুলিশে যে শ্লথগতি ছিল, বর্তমানে তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে শতভাগ জিরো টলারেন্সের ভূমিকায় রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য শত ভাগ কাজ করে যাবে পুলিশ। তিনি আরও বলেন, কিছু সামাজিক অপরাধ ঘটে। সেগুলো ব্যক্তি পর্যায়ে হয় কিন্তু সামষ্টিক কোনো অপরাধ সংঘটিত করে কেউ পার পেয়ে যাবে সেই সুযোগ এখন আর নেই।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে