আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং সচিব আরিফুল ইসলামের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ

কে এম রেজা; পুঠিয়া, রাজশাহী | প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:০১ পিএম
আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং সচিব আরিফুল ইসলামের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ
রাজশাহী পুঠিয়ায় আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং সচিব আরিফুল ইসলাম আরিফের অনিয়ম-দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে পুঠিয়ার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। সে একাধিক স্থানে নিজের এবং তার পরিবারের নামে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন। যা দেখে মানুষ হতবাগ হয়ে পড়েছে। ইতোপূর্বে মানববন্ধন করে তার বিরুদ্ধে আইন মন্ত্রণালয়সহ একাধিক সরকারি সংস্থায় এলাকাবাসীর পক্ষ হতে অভিযোগ দিয়েছেন। তারপর স্থানীয় প্রশাসনের নিকট প্রতিনিয়ত তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগিরা অভিযোগ দিচ্ছেন। কিন্তু অদ্যবধি তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সাধারণ মানুষ সরকারকে দোষারোপ করছে। সে ফ্যাসিবাদ সরকারের সময়ে রাজশাহী এলাকার কয়েকজন নেতার আইন মন্ত্রণালয়ের সবকিছু কাজ দেখভার করতেন। পুঠিয়া রাজবাড়ি বাজারে ১.৭০ শতক জমি কলিমুদ্দিনের ছেলে জামালের নিকট হতে জালিয়াতির মাধ্যমে জমি কিনেছেন। পরবর্তী সময়ে জামাল নিজে জালিয়াতি বিষয়টি বুঝতে পেরে গত ১৬ জানুয়ারিতে রাজশাহী জজ কোর্টে জমি জালিয়াতির একটি মামলা করেছেন। যার মামলা নং ৭/২৫। কলিমুদ্দিনের নাতি হারুন বলেন, সে গত বছরের ১২ মে ২০২৪ এবং চলতি মাসের ১০ ও ১১ এপ্রিল তার ভাড়া করা ক্যাডারদের দিয়ে আমাদের বাজারের জমিটি জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টা করছে। জমি দখল দেওয়া নিয়ে দুই পক্ষের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেওয়ায়। থানা পুলিশ দুই দিন রাজবাড়ি বাজারে দুই পক্ষের উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুলিশ মোতায়েন করে রেখে ছিল। সংঘর্ষ হওয়ার পর দুই পক্ষ থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। আরিফের বিরুদ্ধে ১৮ মে ২০২৩ ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের উপজেলা পরিষদের প্রধান গেটের সামনে ভুক্তভোগি এবং এলাকাবাসীরা মিলে মানববন্ধন করে ছিল। মানববন্ধন শেষে আইন মন্ত্রণালয়সহ একাধিক সরকারি সংস্থায় এলাকাবাসীর পক্ষ হতে অভিযোগ হয়ে ছিল। কিন্তু এলাকাবাসীরা তার সুফল এখনো পায়নি। পুঠিয়া বাজার হতে বারইপাড়া খাঁ পাড়া পর্যন্ত এলজিইডির ৬শত মিটারের একটি সড়ক নির্মাণ শুরু হয়েছে। ড্রাফটিং সচিব আরিফুল ইসলাম আরিফের জমির সামনে দিয়ে সড়কটি নির্মাণ করা হবে। তাই সে সড়ক নির্মাণে বাধা সৃষ্টি করছেন। তার ইচ্ছা জমির সামনে একটি সরকারি নালা রয়েছে। নালার ওপর দিয়ে সড়কটি করতে হবে। আর এলাকাবাসীর দারি যেখানে সড়কটি বর্তমানে আছে সেখানেই সড়কটি নির্মাণ করা হোক। এ নিয়ে ১৩ মে ২০২৪ সড়কের পাশে বসবাসকারি রেজাউল এবং তার পরিবারের নারীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। ১৫ মে ২০২৪ সড়ক কাজ করতে না দেওয়ায় এলাকাবাসীরা গণস্বাক্ষর করে থানায় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। আরিফ পুঠিয়া বাজারে মৃদ কলিমুদ্দিনের ছেলে জামালের নিকট হতে ১ শতাং ৭০ জমি কিনেছে। কলিমুদ্দিনের নাতি আব্দুল হাদি বলেন,আমার দাদার কলিমুদ্দিনের অন্য ওয়ারিশগণ এই জমি নিয়ে রাজশাহী জজ কোর্টে একটি পেনশন মামলা এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা পর্যন্ত রয়েছে। সে আরো বলেন, কোনো ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে কথা বললে তাকে স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে কোনো ঠাসা করে রাখা হয়। সে একাধিক স্থানে কোটি কোটি টাকা দিয়ে নামে-বেনামে জমি কিনেছেন। শুধুমাত্র সরকারি কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য। তার কিনা জমির প্রতিটি দলিল করা হয়েছে একক দানসত্ত্ব দলিল হিসাবে। বারইপাড়া গ্রামের আঃ মজিদ বলেন,আরিফুল ইসলাম আইন মন্ত্রণালয়ের একজন ড্রাফটিং সচিব। সে ক্ষমতা এবং টাকার বড়াই করে এলাকার বিভিন্ন জনের ওপর অত্যাচার করছে। বারইপাড়া গ্রামের ফরহাদ হোসেন কালু বলেন, ক্ষমতা দেখিয়ে তার দুই ভাই মামুন ও ফারুক মিলে পুকুর দখল করে নিয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষ প্রশাসনের নিকটে গেলে আমাদের কথা শুনছে না। সে যেভাবে প্রশাসনকে বলছে, সে অনুযায়ী সকল প্রকার কাজ হয়ে থাকে। যেসব স্থানে জমি কিনেছেন তা হলো, কান্দ্রা গ্রামে জামালের ১ একর ৪৪ জমি ২৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকা, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে আঃ ছালামের ২১ শতক ১৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা, কান্দ্রা গুচ্ছো গ্রামের পাশে নুরুলের বাড়িসহ জমি ২৪ শতক ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা, খাঁ পাড়া বিলে ১ একর ফসলি জমি, বারইপাড়া বিলে ৫০ শতক জমি, পুঠিয়া সরকারি পিএন হাইস্কুলের পাশে মুকুলের ৬ শতক জমি ৪২ লাখ টাকা,কাঁঠালবাড়িয়া মৌজায় কালামের ছেলে বকুলের ১০ শতক জমি ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন। তারপর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়ায় স্ত্রীর সোহেলি পারভিনের বাবা বাড়িতে ৪০ শতক জমি ১০ লাখ টাকা দিয়ে স্ত্রীর নামে কিনেছেন। চাকরি দেওয়া এবং দলিল লিখক লাইসন্সে করে দেওয়ার নামে ছয়জনের নিকট হতে প্রায় ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছেন। যা জমির দলিলগুলো এফএনএস নিকটে কপি রয়েছে। কিন্তু চাকরি এবং লাইসন্সে অধ্যবধি দেয়নি। তার বাড়ি সদর ইউনিয়নের বারইপাড়ার খাঁ পাড়া গ্রামে মৃত আঃ রহমান চিকুর মেঝো ছেলে। আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং সচিব আরিফুল ইসলাম আরিফ একজন সাধারণ পরিবারের সন্তান হয়ে হয়ে সে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তার আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া দেখে মানুষ হতবাক হয়ে পড়েছেন। পুুঠিয়া সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফ খান ঝুন্টু বলেন,আমার জানা মতে আরিফ দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়েছেন। যা দিয়ে বিভিন্ স্থানে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন। আমি তার বিভিন্ন রকম অপরাধ শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। আরিফ আমার চাচা পচন খাঁর ৭ শতক জমি নেওয়ার কথা বলে ১৪ শতক জমি রেজিষ্টারি করে নেয়। সে মনের দুঃখ নিয়ে মারা যায়। খাঁ পাড়া গ্রামের ইমাম সাহেবকে পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কথা বলায় লাঞ্চিত করেছে। এ বিষয়ে পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন বলেন, পর পর দুই দিনের মারামারি ঘটনায় আহত ফিরোজ নামের ব্যক্তি একটি মামলা দায়ের করেছে। কলিমুদ্দিনের ছেলে বউ হাসিনা বেগম বলেন,আরিফের প্রভাবের কারণে থানা মামলা নিতে চাইছে না। আ.লীগের সময়ে আরিফ যেভাবে পুঠিয়ার মানুষদের অত্যাচর করেছে। এখনো প্রশাসনকে ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দিয়ে আমাদের পরিবারকে পুলিশ প্রতিনিয়ত আটক করার চেষ্টা করছে। তাহলে কি আমরা এ দেশে ন্যায় বিচার পারো না। এ ব্যাপারে সিনিয়র সহকারী সচিব (ড্রাফটিং) আরিফুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হয় জমি নিয়ে দুই দিন ধরে মারামারি হয়। সে বলেন আমার সঙ্গে কোনো মারামারি হয়নি। তাকে বলা হয় আপনে পুঠিয়া বাজারের যে জায়গাটি কিনেছেন। সেই ব্যক্তি উন্টা আপনার নামে কোর্টে মামলা করেছেন। সে জমি ফেরত চেয়ে কোর্টে মামলা করেছে বলে মুঠো ফোনের লাইন কেটে দেন।
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে