বর্ষবরণ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজিত ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’য় মোটিফ নির্মাণকারী শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে একটি ঘর পুড়ে গেছে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দিবাগত রাতে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া বাজার এলাকায় এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি এলাকায় চরম আতঙ্ক এবং নিন্দার সৃষ্টি করেছে।
চারুকলার বহুল আলোচিত শোভাযাত্রায় এবছর মানবেন্দ্র ঘোষ একটি বাঘের মোটিফ নির্মাণে অংশ নেন। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো গুজবে অভিযোগ ওঠে, ওই মোটিফটি ‘ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতি’ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে, যা অনেকেই সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখাবয়বের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করেন।
গুজবের জেরে পহেলা বৈশাখের প্রাক্কালে শোভাযাত্রার প্রথম বাঘ মোটিফটি আগুনে পুড়ে যায়। এরপর বিকল্প মোটিফ তৈরি করে উৎসব পরিচালনা করা হয়। কিন্তু বিতর্কের রেশ থামেনি।
এই ঘটনার কয়েকদিনের মাথায় দুর্বৃত্তরা শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। আগুনে তার একটি ঘর সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায় এবং পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান।
এক ফেসবুক পোস্টে মানবেন্দ্র ঘোষ লেখেন,
“আমি শুধু একটি বাঘের মোটিফ নির্মাণে কাজ করেছি। কোনো রাজনৈতিক বা বিতর্কিত মোটিফে জড়িত ছিলাম না। অথচ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু অনলাইন পেজ ও প্রোফাইল আমার নাম ও ছবি ব্যবহার করে ভুয়া প্রচারণা চালিয়েছে। এখন আমার পরিবার আতঙ্কে রয়েছে।”
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ বলেন,
“অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার পরই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষীদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার ইয়াছমিন খাতুন জানান, এ ঘটনায় পুলিশ ইতোমধ্যে আলামত সংগ্রহ করেছে এবং দায়ীদের খুঁজে বের করতে তৎপর রয়েছে। অন্যদিকে, জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লা আশ্বাস দিয়েছেন,
“ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে নিরপেক্ষ তদন্ত চালানো হবে। পুড়ে যাওয়া বাড়িটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পুনর্নির্মাণ করা হবে।”
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন,
“যারা শিল্পীর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে, তাদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। কিছু আওয়ামীপন্থী ব্যক্তি অনলাইনে ঘৃণা ছড়িয়ে এ হামলার উসকানি দিয়েছিল। শিল্পী স্বাধীনতা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম ভিত্তি—এই স্বাধীনতা রক্ষায় আমাদের কঠোর অবস্থান নিতে হবে।”
এই ঘটনাকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। অনেকেই বলছেন, এটি শুধুমাত্র একটি শিল্পচর্চা নয়, বরং মতপ্রকাশ ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার ওপর এক গভীর আঘাত।