আগামী বছরের রমজানের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক বৈঠকে দলটির পক্ষ থেকে এ দাবির কথা তুলে ধরা হয়।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন ডেপুটি হেড অব মিশনের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারও।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ডা. শফিকুর রহমান বলেন, "সরকার আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা বললেও, আমরা মনে করি এত দেরি না করে রমজানের আগেই নির্বাচন হওয়া উচিত। ফেব্রুয়ারির শেষদিকে রমজান শুরু হওয়ার কথা—তাই তার আগেই ভোট হওয়া দরকার।"
তিনি যুক্তি তুলে ধরে বলেন, "জুন মাসের দিকে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়ে যায়। তখন ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নির্বাচন আয়োজন কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।"
এসময় মার্কিন প্রতিনিধি দল জামায়াতের কাছে ক্ষমতায় গেলে দলটির সম্ভাব্য অর্থনৈতিক, পররাষ্ট্র, নারী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক নীতি সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে জামায়াত আমির বলেন, "আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চর্চা করি, দেশেও তা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।"
বৈঠকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে সংঘটিত ঘটনাবলির বিচার নিয়েও কথা বলেন জামায়াতের নেতারা। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, "জুলাইয়ে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবার এখনও শোকের মধ্যে রয়েছে। বহু মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমরা চাই এসব ঘটনার বিচার আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হোক, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে।"
এছাড়া, বাংলাদেশের ওপর সম্প্রতি আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক নিয়েও আলোচনায় আসে। জামায়াত আমির জানান, "আমরা মার্কিন প্রতিনিধিদের অনুরোধ করেছি, যেন তারা এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করেন। দেশের অর্থনীতি এখন খুবই নাজুক অবস্থায় আছে। শুল্ক আরোপ এই সংকটকে আরও গভীর করবে।"
বৈঠকে আরও জানানো হয়, জামায়াতে ইসলামী একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। এই প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিশ্চিত করবে বলেই তাদের বিশ্বাস।
এদিন মার্কিন প্রতিনিধিরা জামায়াত ছাড়াও বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেন। সফররত প্রতিনিধি দলে ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপ-সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক, পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হেরাপ এবং মিয়ানমারে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুসান স্টিভেনসন। তারা আগামীকাল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।