চেতনায় ভর নয়, চাই চেতনা ধারণ করা

এফএনএস (মো: হেলাল উদ্দীন; বাগমারা, রাজশাহী) : : | প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:৩৫ পিএম
চেতনায় ভর নয়, চাই চেতনা ধারণ করা

সম্প্রতি চেতনা শব্দের অতি ব্যবহার এবং সীমাহীন টানাহ্যাঁচড়ার কারণে চেতনা নিয়ে নতুন করে চেতনাবোধের উদ্রেক খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিশেষ করে বিগত সাড়ে পনেরো বছরে এ বয়ানের সর্বোচ্চ ব্যবহার ছিল বিস্ময়কর। কারণে অকারণে শব্দটির অযাচিত ব্যবহার একপর্যায়ে উপযোগিতার নিম্ন সীমা অতিক্রম করে। কোনো না কোনোভাবে যদি বয়ানে, কর্মে অথবা পরিকল্পনায় শব্দটিকে একবার বসানো যায়, তাহলেই বাজিমাত! বাস্তবে হয়েছেও তাই। বহুল ব্যবহৃত এসব চেতনার মধ্যে একুশের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর চেতনা অন্যতম। গত মাসে একুশে ফেব্রুয়ারির একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে ছিলাম। আলোচনার বিষয় ছিল, ‘জাতীয় জীবনে একুশের চেতনা’। অসংখ্য জ্ঞানীজনের চমৎকার শব্দমালায় বক্তৃতার মঞ্চ আমোদিত হলো। সুধীজনের করতালিতে মিলনায়তন মুখরিত হলো। কিন্তু চেতনার বিষয়টি কোনো বক্তাই স্পষ্ট করলেন না। শ্রোতাদের একটি বড় অংশ ছিল স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। হয়ত আমার মতো তাদেরও চেতনা নিয়ে জানার আগ্রহ অধরাই রয়ে গেল।  

জাতি হিসেবে আমাদের রয়েছে সুদীর্ঘ আত্মত্যাগের বর্ণিল সব ইতিহাস। উনিশশত সাতচল্লিশ থেকে দুইহাজার চব্বিশের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় লড়াই-সংগ্রাম আর সাফল্যের বীরগাথা যেন সেইসব গৌরবোজ্জল ইতিহাসকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নোর যুক্তফ্রন্ট, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে এ জাতির গৌরবগাথা সোনালী অর্জন। সব আন্দোলন সংগ্রামে নিখাদ প্রমাণিত- বাঙ্গালি বীরের জাতি, বাঙ্গালি লড়াকু জাতি। এ জাতি আপোষহীন, মাথা নত না করার ইস্পাত কঠিন ঐক্যের জাতি বাঙ্গালি। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামের ভিত্তিই ছিল চেতনা। চেতনা খুব গভীর এবং বিশাল তাৎপর্যময় একটি শব্দ। কোনো বিষয়ের গভীর অনুধাবনই হলো চেতনা বা উপলব্ধি। ইংরেজ দার্শনিক জন লক এঁর মতে চেতনা একটি মানসিক অবস্থা; অর্থাৎ ‘মানুষের নিজের মনে যা ঘটে তার উপলদ্ধি’। সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম এঁর মতে, ‘চেতনা কোনো ব্যক্তিগত অবস্থা বা ঘটনা নয়, বরং এটি একটি সামাজিক ঘটনা। একটি সামাজিক ঘটনা হিসেবে এটি সমগ্র সমাজে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর নিজস্ব একটি জীবন রয়েছে’। 

এক অর্থে চেতনা হলো জাগ্রত হওয়া, যা একটি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জানান দেয়। মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও অনুশীলনের মাধ্যমে চেতনা সমাজকে একত্রিত করে। চেতনার উন্মেষ না ঘটলে কোনো বিক্ষোভ বা সংগ্রাম সমাজের তৃণমূলে অনুরণিত হয় না; জনগণ আন্দোলিত হয় না; ঐক্যবদ্ধ হয় না জাতি। চেতনা তৈরি হয় বৈষম্য, অসমতা, অবিচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও অধিকার আদায়ের দাবি থেকে। অসন্তোষ থেকে সৃষ্ট প্রতিবাদ এক সময় বিদ্রোহ, আন্দোলন, গণ-আন্দোলনের পথ ধরে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়; কখনো তা বিপ্লবেরও জন্ম দেয়। এভাবে চেতনার মাধ্যমেই মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও ঐতিহ্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অনুরণিত হয়। কিন্তু বাঙ্গালির দুর্ভাগ্য, বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন থেকে নিয়ে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে চূড়ান্ত বিজয়ের পর বিজয়ের চেতনা তারা ধরে রাখতে পারেনি। চেতনার দোহাই দিয়ে বরং করা হয়েছে চেতনাবিরোধী সব কাজ। 

বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের দিকে আলোকপাত করলে দেখা যাবে, ভাষা আন্দোলনের তিয়াত্তর বছর পার হলেও ভাষা ও সংস্কৃতির যতটুকু বিকাশ ঘটা উচিত ছিল, তা আমরা ঘটাতে পারিনি। অথচ বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন প্রজন্মের মধ্যে দেশাত্মবোধ সৃষ্টি নিতান্ত অসম্ভব। একুশ আমাদের প্রতিবাদী চেতনার প্রতীক, গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের প্রতীক। চারটি ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে একুশের আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছিল, এক. রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, দুই. রাজবন্দীদের মুক্তি চাই, তিন. শহীদ স্মৃতি অমর হোক, চার. সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হোক। এই চারটি ভিত্তিই ছিল একুশের চেতনার মূলমন্ত্র। এই ভিত্তিগুলোর মধ্যে প্রথমটি অর্জিত হলেও পরের গুলো আমরা আজও প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে শত শত মানুষ হয়রানির শিকার হয়। সরকারও ক্ষমতায় থাকাকালীন নীতি বা চেতনার তোয়াক্কা না করে যাচ্ছেতাই করে। শহীদদের যেভাবে মর্যাদা দেওয়া উচিত, তা কি আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি, পারিনি। তাছাড়া সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর দাবিটি কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে সেটা বিবেকবান পাঠকের কাছেই ছেড়ে দিতে চাই। 

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের দিকে আলোকপাত করলেও একই চিত্র সামনে আসবে। পাকিস্তানের পক্ষপাতমূলক অন্যায় আচরণ, অবিচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ ও বঞ্চনার ফলে বাঙ্গালিরা অনেকটা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়। এই বাস্তবতা অনুধাবনই ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উন্মেষ। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা হয় - ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রীরূপে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করলাম’। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মধ্যেই প্রচ্ছন্নভাবে ফুটে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্লেষণেও আমরা চারটি স্তম্ভের অস্তিত্ব খুঁজে পাই, এক. সাম্য, দুই. মানবিক মর্যাদা, তিন. সুবিচার, চার. গণতন্ত্র। গণতন্ত্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্যতম অনুধ্যান। মোটা দাগে বলতে গেলে, বৈষম্যমুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, শোষণমুক্ত সামাজিক ন্যায়বিচার ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করার নামই হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের পেছনেও জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এই চারটি মূল আকাঙ্ক্ষা কাজ করেছিল। আমরা কি সেই আকাঙ্ক্ষার জায়গাগুলো ধারণ করতে পেরেছি আদৌ!

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো স্বাধীনতার পঞ্চাশ পেরিয়েও আমরা কি সেই চেতনার পথ ধরে এগোতে পেরেছি। জবাব খুব স্পষ্ট। যদি পারতাম, তাহলে তো চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান পরখ করতে হতো না জাতিকে। চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে স্বৈরাচার মুক্তির লড়াই হিসেবে অনেকে বিবেচনায় নেয়। যদি তাই-ই হয়, তাহলে এ লড়াই তো আমরা আগেও দেখেছি, আবার কেন? ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান এবং নব্বইয়ের গণআন্দোলনে আরেক স্বৈরশাসক মুহাম্মদ এরশাদের পতন দেখেছি। আমরা কি সেসব করুণ পরিণতি থেকে সামান্যতম শিক্ষা নিতে পেরেছি, পারিনি। যদি পারতাম তাহলে আর চব্বিশের জন্য অপেক্ষা করতে হতো না। বীরের জাতি, লড়াকু জাতি বাঙ্গালির মূল সমস্যাটা এখানেই। যে চেতনা ধারণ করে তারা বিজয় মুকুট ছিনিয়ে নেয়, পরবর্তীতে তা আর দৃঢ়তার সঙ্গে ধরে রাখতে পারে না। পারে না বলেই ভাষার মাস ও বিজয়ের মাস এলে এক রাশ আক্ষেপ আর হতাশা নিয়ে হাজির হতে হয় জাতির সামনে। 

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তীও আমরা প্রায় একই চিত্র অবলোকন করছি। নিছক কোটা সংস্কার ঘিরে জমাট বাঁধা ছাত্র আন্দোলন একপর্যায়ে সরকারের অতিরিক্ত বল প্রয়োগ, গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়। এক্ষেত্রেও সব হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে সরকারের পদত্যাগসহ সকল প্রকার বৈষম্য নিরসন এবং সংস্কারের মাধ্যমে একটি উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছে জাতি। যে চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে ছাত্র-জনতা বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে প্রাণ বিসর্জন দিতে পিছপা হয়নি, দল-মত নির্বিশেষে সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মে এক কাতারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করেছে; কিন্তু বিজয়ের পর পরই দেখা গেল সে ঐক্যে সীমাহীন ছন্দপতন। আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড নিয়ে অযাচিত বাক্যবিনিময় জাতিকে হতাশ করেছে। সংস্কার, নির্বাচন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপরাধীদের বিচার প্রশ্নে গোটা জাতি এখন বিভক্ত। এমনটি তো কাম্য ছিল না! শহিদদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি, হাসপাতালে আহতদের আর্তচিৎকার ও মাতমে ভারি হয়ে আছে বাতাস। অথচ আমরা যে যার মতো হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। কোথায় আমাদের চেতনা! কোথায় মনুষ্যত্ব! দুদিন আগে যে ছাত্ররা জীবনের মায়া ত্যাগ করে এক দফার ঘোষণা করল জাতির মুক্তির জন্য, এক্ষণে তাদেকে অপমান-অপদস্ত করতে কুণ্ঠাবোধ করা হচ্ছে না। এটাই নির্মম বাস্তবতা!

প্রতিটি বিজয় পরবর্তী দেখা যায়, বিজয়ের মূল আকাঙ্ক্ষা বা চেতনা নিয়ে শুরু হয় কামড়াকামড়ি। সামান্য ব্যক্তি স্বার্থ আর লোভের বশবর্তী হয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদগারে মেতে ওঠে; প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি করে নষ্ট করা হয় ঐক্য। বিগত সাড়ে পনেরো বছরে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিশ্লেষণে এমনটিই দেখা যায়; সে সময়ে যত অনিয়ম আর অপকর্মের ঘটনা ঘটেছে তার মূলেই ছিল বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বয়ান। যদি চেতনায় ভর না করে তা ধারণ করা হতো, তাহলে এমন পরিস্থিতি ঘটত না। সুযোগ সন্ধানীরা লুফে নিতে পারত এ বয়ান; ঘটত না চেতনার নামে ব্যবসা। বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগ হতে শুরু করে স্তর বিশেষে পুলিশ, আমলাসহ শাসন বিভাগের সব দপ্তরের প্রায় প্রত্যেকেই সহজ এ ব্যবসায় বিনিয়োগ শুরু করল। লাভবান হলো বিনিয়োগকারীরা, কিন্তু ক্ষতি হয়ে গেল দেশের, ক্ষতি হলো জনগণের, ক্ষতি হলো খোদ আওয়ামী লীগের। এ বিনিয়োগ বিনিয়োগ খেলা এখনই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। নতুবা বিগত সময়ে যারা স্বৈরাচারের ভুভুজেলা বাজিয়েছে, এখন তারাই আবার ভোল পাল্টিয়ে বহাল তবিয়তে তাবত স্বমহিমায় আবির্ভূত হবে। 

স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যবধি সব শহিদেরা যে চেতনা নিয়ে দেশের জন্য নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, সেই রক্তের কাছে জাতি হিসেবে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে আবার আমাদের অপেক্ষা করতে হবে চেতনার ওপর ভর দেওয়া সেই সব চেতনা ভক্ষণকারীদের নিষ্পেষণের জন্য। পরাজিত শক্তি আবার নতুন করে অস্তিত্বের জানান দেওয়ার সুযোগ পাবে। উদ্ভূত অনাকাঙ্ক্ষিত বিশৃঙ্খলার ফাঁকে ফায়দা হাসিলে মত্ত হয়ে উঠবে অতীতের তেলবাজ, চাটুকার আর মোসাহেবের মতো কিছু সুযোগ-সন্ধানী স্বার্থান্বেষী মহল। যারা চেতনার দোহাই দিয়ে ঠিক এর বিপরীতে অবস্থান নিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করবে। চেতনা লালন বা ধারণ নয় চেতনা ভাঙ্গিয়ে এর ওপর ভর দিয়ে সুবিধা আদায়ে বেপরোয়া হয়ে পড়বে। মূল চেতনা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে এরা জাতিকে নিত্য নতুন চেতনার বয়ান শোনাবে। এক সময় যারা গর্তে লুকিয়ে থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছিল, তারাই আবার জাতিকে শাসানি দেবে। মূল লক্ষ্য থেকে ছিটকে পড়বে জাতি; সুগম হবে আবার দাসত্বের আগ্রাসন। সাতচল্লিশের পর থেকে অর্জিত সব বিজয়ের সুফল আলোর মুখ না দেখার ইহাই অন্যতম কারণ, যা এ জাতির এক নির্মম ইতিহাস! 

এমন বাংলাদেশ আমরা আর দেখতে চাই না। আবার যদি সেই একই পথে আমরা চলতে থাকি, তাহলে বিপন্ন হবে গণতন্ত্র; বৈষম্যমুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, অন্যায়, অবিচার, শোষণ, নিষ্পেষণমুক্ত সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক বাংলাদেশের পরিবর্তে বাস্তবে দেখতে হবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, দুর্নীতি ও দুর্নীতির ক্রমবিকাশ। দলীয়করণের ব্যাপক প্রভাবে সরকার দলীয় ব্যক্তি ছাড়া অন্য নাগরিকদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় বা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা, চাকরি, ব্যবসা ইত্যাদির প্রত্যাশা হবে অলীক ভাবনা ছাড়া আর কিছু নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে বা অন্য সরকারি দপ্তরসমূহে বা প্রশাসনে সরকারদলীয় লোকজনের জন্য বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা এবং সাধারণ মানুষ ও সরকারদলীয় লোকজনের মধ্যে নিয়মনীতি ও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ হবে খুব স্বাভাবিক ঘটনা। জাতি দেখেছে, বিগত পনেরো বছরে কিভাবে তা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও আলোচিত ও সমালোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে সব শাসকের আমলেই কম-বেশি সরকারদলীয় ব্যক্তিরা যদি প্রথম শ্রেণির নাগরিক হন, সেখানে অবস্থানভেদে অন্যরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণির! এগুলোর কোনটাই চেতনার আওতায় পড়ে না, বরং রীতিমত চেতনার পরিপন্থি। আমরা আর চেতনা নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে পারি না; চেতনা হৃদয়ের স্পন্দন, সেটিকে যদি যথাযথ ধারণ করতে পারি তাহলে এ জাতি আর পথ হারাবে না। স্মরণে রাখা দরকার, এ আমাদের দয়া নয়, দায়। চব্বিশের গণ-আন্দোলনে ছাত্র-জনতা আবার নতুন করে সে সুযোগ এনে দিয়েছে, এ সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করা সমীচীন হবে না। তাই প্রয়োজন নতুন এক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। যার ভিত্তি হবে, ‘চেতনায় ভর নয়, চেতনা ধারণ করা’।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে