রাজশাহীর তানোরে কৃষি প্রণোদনার সার-বীজ বিতরণে অনিয়ম ও দূর্নীতির বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি গত ২০ মার্চ বৃহস্প্রতিবার প্রথম দিন কৃষি প্রণোদনা বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লিয়াকত সালমান উপস্থিত থেকে বিতরণ করেন। এসময় কৃষি প্রণোদনা বিতরণ তালিকায় অনিয়মের মৌখিক অভিযোগ করেন কৃষকেরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আউশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে (আউশ প্রণোদনা) বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করার কথা।
কিন্তু নিয়মের কিছু ব্যতিক্রম ঘটেছে। সব শেষ গত ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার তানোর পৌর এলাকায় ১০ কেজি ডিএপি, ১০ কেজি এমওপি (পটাশ) ও ৫ কেজি করে ধানবীজ দেয়া হয়। কিন্তু ভুয়া কৃষক ও কৃষকের স্বাক্ষর জাল করে তারা প্রণোদনার সার-বীজ হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও লোকসমাজে সমলোচনা চলছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আউশ প্রনোদনা বিতরণে পুরো উপজেলায় ৬ হাজার কৃষকের নামের তালিকা তৈরি করা হয়।
এরমধ্যে কলমা ইউপিতে ৮৫০ জন, বাধাইড় ইউপিতেও ৮৫০ জন, পাঁচন্দর ইউপিতে ৮০০ জন, তালন্দ ইউপিতে ৪৮০ জন, কামারগাঁ ইউপিতে ৭০০ জন, সরনজাই ইউপিতে ৪৭০ জন, চাঁন্দুড়িয়া ইউপিতেও ৪৭০ জন ও তানোর পৌরসভায় ৫৮০ জন। আর মুন্ডুমালা পৌরসভায় ৮০০ জন ব্যক্তির নামের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। উপ-সহকারী কৃষি অফিসাররা প্রত্যেক ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রান্তিক কৃষকের পরিবর্তে প্রভাবশালী সার-কীটনাশক ব্যবসায়ীর দোকানে বসে তাদের আত্নীয় ছাড়াও নিজস্ব ব্যক্তিদের নামের তালিকা প্রস্তুত করেছেন।
সেই মোতাবেক আউশ প্রনোদনার উপকরণ বিতরণ করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা কৃষি অফিসের সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার এমদাদুল হক এসব অনিয়মের মুল হোতা। তিনি এরআগে উপ-সহকারী কৃষি অফিসার থাকা অবস্থায় কেবল তার মুখ চেনা পরিচিতদের নাম দেন। বিনিময়ে কমিশন ভাগও পান তিনি। তবে, তিনি এমন অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, তালিকা প্রণয়নে অনিয়মের কারণে অবস্থা সম্পন্ন ও (ভুয়া) কৃষক প্রণোদনা পেলেও প্রকৃত কৃষকেরা বঞ্চিত হয়েছে।
আবার একই পরিবারের একাধিক সদস্য প্রণোদনার কৃষি উপকরণ পেয়েছেন। কতিপয় কৃষি কর্মকর্তা আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে প্রকৃত কৃষককে বঞ্চিত করে (ভুয়া) কৃষকের তালিকা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এদিন অধিকাংশ (ভুয়া) কৃষক প্রণোদনার উপকরণ পেয়ে বাজারের এক সার ব্যবসায়ীর দোকানে বিক্রি করে দেয়। এতে সরকারের মহতি উদ্যোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে চলেছে। কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে সরকারের দেয়া সহায়তা থেকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা বঞ্চিত হচ্ছে।
তিনি এখানে দায়িত্ব নেবার পর থেকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ডালপালা মেলেছে। তবে, তিনি এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এদিকে কৃষি কর্মকর্তার কাছে প্রণোদনার কৃষকের তালিকা চাইলে তিনি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তবে, এসব কৃষকের নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করলেই তালিকা প্রণয়নে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাঠপর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ইতিপুর্বে উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন পেয়াঁজ চাষের জন্য ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই ধাপে অর্ধকোটি টাকা প্রণোদনা বরাদ্দ দেয়া হয়। এরমধ্যে কৃষক প্রতি নগদ ২ হাজার ৮০০ টাকা করে নগদ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রদান করা হয়। কিন্তু সেখানেও কৃষি কর্মকর্তা নানা অনিয়ম করেছেন। কৃষকদের কোন টাকা দেয়া হয়নি।
এব্যাপারে কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্টরা বলছেন এবারে পিয়াজ চাষিদের প্রণোদানর কোন টাকা দেয়নি সরকার। উপকারভোগী একাধিক কৃষকের অভিযোগ, প্রণোদনার তালিকায় কৃষক নয় এমন ব্যক্তিসহ স্বজনপ্রীতি এবং অল্প কিছু কৃষককে নামেমাত্র প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল। তারা বলেন, চলতি মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের প্রণোদনা প্রকল্পে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কৃষককে কোন প্রনোদনার টাকা দেয়া হয়নি। কিন্তু প্রতিটি কৃষককে বিকাশে ২৮০০ টাকা করে পাঠানোর কথা থাকলেও তালিকার অনেক কৃষক সে টাকা আজও পায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কীটনাশক ব্যবসায়ী বলেন, কৃষি প্রযুক্তি মেলা আয়োজনের জন্য সরকারিভাবে কয়েক লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু তার পরেও প্রতিটি কীটনাশক ব্যবসায়ীর কাছে থেকে আনুঃপাতিকহারে চাঁদা আদায় করা হয়। অথচ তারা দায়সারা আয়োজন করে অতিথিদের নাস্তাও ছিল নিম্নমাণের যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এমনকি উপজেলার দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
এছাড়াও অফিস সময় মেনে অফিস না করা ও বিভিন্ন ফসলের প্রদর্শনীতে নানা অনিয়ম নিয়মে পরিণত হয়েছে বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। এবিষয়ে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রতিনিধি জানান, তারা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, অথচ কৃষি প্রযুক্তি মেলা ও কৃষকের তালিকা প্রদানে তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এটা শুধু তাদেরকে নয়, যারা তাদের ভোট দিয়েছেন তাদের সকলকে অবজ্ঞার সামিল। ই/তা