নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বড় গাড়ফা উত্তরপাড়া গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী জাহিরুল ইসলামের মেয়ে ও গাড়ফা আজেদা নূরানী কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষার্থী শিশু আকলিমা আরা জুঁই (৭) হত্যার ঘটনায় পুলিশ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পাবনার চাটমোহর থানা পুলিশ,নাটোরের বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ ও নাটোর ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে এদেরকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত হলো নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চান্দাই ইউনিয়নের দিয়ার গারফা গড়মাটি গ্রামের শাহিন আলমের ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিয়াম আলম (১৩),একই ইউনিয়নের গারফা গ্রামের আয়নাল হকের ছেলে শেখ সাদী (১৬),গারফা গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে সাকিব হোসেন (১৬),গারফা গ্রামের সুলতান হোসেনের ছেলে সোহেল রানা (২৫) ও চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে আব্দুল্লাহ (১৭)। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
গতকাল রবিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে চাটমোহর থানা চত্বরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল আলম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। ওসি বলেন,গত পহেলা বেশাখে (১৪ এপ্রিল) বাংলা নববর্ষের দিন আনন্দ ফুর্তি করার জন্য গ্রেপ্তারকৃত ৫জন গাঁজা কিনে সেবন করে। এদিন বিকেল ৫টার দিকে শিশু জুঁইকে শেখ সাদী রাস্তা হতে তুলে জনৈক দুলাল হোসেনের কলাবাগানে নিয়ে যায়। এসময় শিশু জুঁইকে ৪ জন মিলে ধর্ষন ও পাশবিক নির্যাতন চালায়। শিশু সিয়ামকেও প্রলুব্ধ করে ধর্ষণ করতে। শিশুটির অবস্থা খারাপ হলে তারা চাটমোহর উপজেলার রামপুর গ্রামে আফজাল হোসেনের ভুট্টা খেতে এনে শিশুটির লাল রংয়ের প্যান্ট গলায় লগিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। পরে শিশুটির মুখে এসিড নিক্ষেপ করে ফেলে রেখে যায়। ওসি মনজুরুল আলম আরো জানান,পরদিন ১৫ এপ্রিল সকালে ভুট্টা খেতে জুঁইয়ের মৃতদেহ পাওয়া যায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা মর্গে পাঠায়। এ ব্যাপারে নিহতের মা মোমেনা খাতুন চাটমোহর থানায় মামলা দায়ের করেন। চাটমোহর ও বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ এবং নাটোর ডিবি পুলিশ হত্যাকান্ডের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। এক পর্যায়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওসি জানান,অভিযুক্তরা জুঁই হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত। অভিযুক্তরা ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে শিশু জুঁই হত্যার প্রতিবাদে,হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে ঘটনার পর থেকেই ফুঁসে ওঠে চাটমোহর ও বড়াইগ্রামবাসী। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,রাজনৈতিক দল,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠণ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করেছে। চাটমোহর ও বড়াইগ্রাম উপজেলা সদরসহ নিহত জুঁইয়ের গ্রাম বড় গারফা গ্রামেও প্রতিদিনই প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করা হয়। এছাড়া দুই উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ এপ্রিল দাদীর বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হয়ে নিখোঁজ হয় গাড়ফা গ্রামের মালেয়েশিয়া প্রবাসী জাহিরুল ইসলামের শিশুকন্যা আকলিমা আরা জুঁই। পরদিন বাড়ির অদুরে চাটমোহর উপজেলার রামপুর গ্রামের একটি ভুট্টা খেতে তার বিবস্ত্র ও মুখমণ্ডল অ্যাসিডে ঝলসানো লাশ পাওয়া যায়। এরপরই তৎপরতা শুরু করে পুলিশ। ৪ দিনের মধ্যেই পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটন ও দোষীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।