চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ পাহাড়ি শিক্ষার্থীকে খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের আটদিন পর মুক্তি দিয়েছে অপহরণকারীরা। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় সারাদেশে। দীর্ঘ আটদিন ধরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকা পরিবার, বন্ধু, সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে গড়ে ওঠে বিক্ষোভ-প্রতিরোধের ঢেউ। শেষমেশ জনমতের চাপে নতি স্বীকার করে অপহরণকারীরা, ধাপে ধাপে ছেড়ে দেয় পাঁচ শিক্ষার্থীকে।
১৬ এপ্রিল ভোরে খাগড়াছড়ি সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে বিজু উৎসব শেষে চট্টগ্রামে ফেরার পথে অপহৃত হন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা ও তার চার বন্ধু—মৈত্রীময় চাকমা (চারুকলা), অলড্রিন ত্রিপুরা (চারুকলা), দিব্যি চাকমা (নাট্যকলা) এবং লংঙি ম্রো (প্রাণিবিদ্যা)। তারা সবাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
সেই সময় অপহরণকারীরা একটি অটোরিকশা চালককেও তুলে নিলেও পরে তাকে ছেড়ে দেয়। শিক্ষার্থীদের নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে। অপহরণের পেছনে পার্বত্য এলাকার রাজনৈতিক বিরোধকেই মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এই ঘটনার জন্য সন্তু লারমা সমর্থিত পিসিপির নেতারা পাহাড়ের প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠন ইউপিডিএফকে দায়ী করলেও প্রসীত খিসা নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ তা অস্বীকার করে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। তবে শিক্ষার্থীদের মুক্তি প্রক্রিয়ায় কোনো পক্ষই সরাসরি দায়িত্ব স্বীকার করেনি।
শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নয়, পার্বত্য তিন জেলাজুড়ে গড়ে ওঠে প্রতিবাদ-আন্দোলন। সাধারণ শিক্ষার্থী, বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠন ও মানবাধিকারকর্মীরা অপহৃতদের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হন। পিসিপির বিবৃতি অনুযায়ী, এই জনচাপই অপহরণকারীদের নতি স্বীকারে বাধ্য করে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আন্দোলনে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে পিসিপি।
শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে নয়, বরং ধাপে ধাপে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। দিব্যি চাকমার মা ভারতীয় দেওয়ান জানান, “আমার মেয়ে ফিরে এসেছে, কিন্তু কখন বা কোথায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা ঠিকভাবে বলতে পারছে না।” অন্য শিক্ষার্থীরাও বর্তমানে তাঁদের নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন।
এই ঘটনা আবারো প্রমাণ করেছে, পার্বত্য অঞ্চলের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কেবল রাজনীতিকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না—তা গিয়ে আঘাত হানে নিরীহ শিক্ষার্থীর জীবনেও। তবে এটাও বোঝা গেল, একতাবদ্ধ জনমত ও গণচাপ যদি যথাযথভাবে গড়ে তোলা যায়, তাহলে কোনো অপরাধী গোষ্ঠী দীর্ঘদিন নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে পার পেতে পারে না।