ব্যাটারিচালিত রিকশায় দৌরাত্ম্য কমাতে হবে

এফএনএস | প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:৪৫ পিএম
ব্যাটারিচালিত রিকশায় দৌরাত্ম্য কমাতে হবে

রাজধানী ঢাকা এমনিতেই যানজটের শহর। এর মধ্যেই নতুন করে চাপ বাড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। নিয়ম না মেনে, অনুমতি ছাড়াই এই যানবাহনগুলো শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে মূল সড়কেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সাধারণত এ অটোরিকশাগুলোর কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। চালকদের অনেকেই অপ্রাপ্তবয়স্ক। বেশির ভাগই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। তারা ট্র্যাফিক সিগন্যাল মানেন না, চালান বেপরোয়া গতিতে। হঠাৎ থামা, হঠাৎ বাঁক নেওয়া এসবই নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে রাস্তায় বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী রাজধানীতে এ ধরনের যানবাহন চলাচলের অনুমতি নেই। তারপরও দীর্ঘদিন ধরে এদের চলাচল চলছে নির্বিঘ্নে। এতে করে বৈধ যানবাহন চালকদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে ক্ষোভ ও আশঙ্কা। সাধারণ মানুষও পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে। এ ছাড়া এ যানবাহনগুলো নগরের যাতায়াতব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। নির্ধারিত রুট বা স্টপেজের তোয়াক্কা না করে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে তারা। যখন ব্যাটারিচালিত রিকশা সড়কে ছুটে চলে, তখন চালকদের পা থাকে পথচারীদের বুক বরাবর। আর তারা ছুটে চলে ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে। চাকার আকার ২৮/২৯ ইঞ্চি এবং ব্রেকিং সিস্টেম অত্যন্ত নাজুক। ফলে একদিকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কার্যকর থাকে না, অন্যদিকে জরুরি প্রয়োজনেও ব্রেক কাজ করে না। ফলে যাত্রীসহ উল্টে পড়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে। এতে নগরীর অলিগলিতে অহরহই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। হাত-পা ভাঙা ছাড়াও চিরদিনের জন্যও কেউ কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ কী এক অদৃশ্য-অবৈজ্ঞানিক-অযৌক্তিক শক্তির বশে বাহনটিকে নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না। চালকরাও ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি পথচারীদের ওপর যখন-তখন চড়াও হচ্ছেন। ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। চালকরা আইনলঙ্ঘনের দুঃসাহস দেখাচ্ছে। সাধারণ মানুষের ওপর তারা অত্যাচার শুরু করেছেন। লাঠি নিয়ে পথচারী ও মোটরসাইকেল আরোহীর ওপর চড়াও হচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি মোটরসাইকেলে দুজন আরোহী যাচ্ছেন। এ সময় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা ওই আরোহীদের লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন। মোটরসাইকেলের গতি বাড়িয়ে চালক দ্রুত স্থানত্যাগের চেষ্টা করছেন। কিন্তু ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা বারবার তার গতিরোধ করে তাকে পেটাচ্ছেন। পরিস্থিতি যখন এমন, তখন প্রশ্ন উঠছে, অবৈজ্ঞানিক-অযৌক্তিক বাহনের চালকরা কোনো শক্তির জোরে জনগণের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছেন? কেন এই বাহনটি বন্ধ হচ্ছে না? কেন এই চালকদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন? উল্লিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর যা-ই হোক, সেগুলো বিশ্লেষণপূর্বক সমাধানে আসতে হবে। একইসঙ্গে দ্রুত ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে রাষ্ট্রকে। পাশাপাশি সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপনচিত্র, পথনাটক, সভা-সেমিনার ও গণসংগীতের আয়োজন করা যেতে পারে। জনগণকে সচেতন করে তুলতে বিজ্ঞাপনচিত্র বেশ কার্যকরী একটি পদক্ষেপ। তাই গণমাধ্যমে নিয়মিত গণসচেতনতামূলক বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণের মাধ্যমে ব্যাটারিচালিত রিকশা সৃষ্ট ভয়াবহতা তুলে ধরতে হবে।