বাংলাদেশের বনাঞ্চলে হাতি হত্যার হারে যে উদ্বেগজনক ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে, তা শুধু পরিবেশ নয়, আমাদের সভ্যতার বিবেককেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। চলতি বছরের মাত্র ছয় মাসে সারা দেশে ১৮টি হাতির মৃত্যু, যার বেশিরভাগই সহিংস ও অস্বাভাবিক, এই মহাবিপন্ন প্রাণীটির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে। দাঁত ও নখের লোভে বৈদ্যুতিক ফাঁদ, গুলি কিংবা কুপিয়ে হত্যার মতো নৃশংস পদ্ধতিতে হাতি হত্যা এখন নিয়মিত ঘটনার মতোই প্রকাশ পাচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো, বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও বারবার উঠে আসছে, যা সংরক্ষণ ব্যবস্থার দুর্বলতাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। ১৯৮০ সালে দেশে ৩৮০টি হাতি থাকলেও ২০১৬ সালের সর্বশেষ জরিপে তা কমে ২৬৮-তে দাঁড়ায়। এরপর আর কোনো জরিপ না হওয়াই প্রমাণ করে, এই প্রজাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। ৮ এপ্রিল কক্সবাজারের ফাঁসিয়াখালীর জলদি রেঞ্জে কুপিয়ে হত্যা, ১১ মার্চ রাঙামাটির গর্ভবতী হাতির মৃত্যু কিংবা উখিয়ায় গুলি করে হত্যাÑপ্রতিটি ঘটনাই আমাদের নীতিনির্ধারক, বন রক্ষা কর্মী এবং সচেতন নাগরিকদের সামনে একটি কঠিন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়: আমরা কি প্রকৃতির এই অনন্য জীবটিকে চিরতরে হারিয়ে ফেলার পথে হাঁটছি? হাতির আবাসভূমি হ্রাস, খাদ্যের অভাব ও মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্বÑসব মিলিয়ে হাতির বেঁচে থাকার পরিবেশ সংকুচিত হয়ে আসছে। বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের উদ্যোগ যেমনÑহাতির চলাচলের জন্য খাস জমি বরাদ্দ ও খাদ্য সমৃদ্ধ আবাস তৈরির পরিকল্পনাÑপ্রশংসনীয় হলেও, তা বাস্তবায়নে প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক কার্যকরী পদক্ষেপ এবং শক্তিশালী আইনি কাঠামো। আমরা ভুলে যেতে পারি না, একটি হাতির মৃত্যু শুধু একটি প্রাণ হারানো নয়Ñতা একটি বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পূর্বাভাস। এখনই যদি কঠোর আইন, সঠিক বাস্তবায়ন, এবং জনসচেতনতা না বাড়ে, তবে একদিন হয়ত আমরা শুধু ইতিহাসের পাতায় হাতির কথা পড়বোÑবাস্তবতায় নয়।