ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে পূর্ব বিরোধের জেরে দুই গ্রামের সংঘর্ষে ইউএনও ওসিসহ উভয় পক্ষের ৩০ জন আহত হয়েছে। গত বুধবার রাতে উপজেলা সদরেরর চানমনি পাড়া ও মোঘলটুলা গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৩ ব্যক্তিকে আটক করেছেন। পুলিশি গ্রেপ্তারের ভয়ে ওই দুই গ্রাম এখন পুরূষশুন্য হয়ে পড়েছে। আর পুলিশ বলছেন, তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সূত্র জানায়, গত কয়েক মাস আগে মুঠোফোনের চার্জার ক্রয় বিক্রয়কে কেন্দ্র করে প্রথমে দুই ব্যক্তির মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। পরে এই ঘটনায় চানমনি পাড়া ও মোঘলটুলার বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর থেকে ওই দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। গত বুধবার সন্ধ্যায় চানমনি পাড়ার প্রয়াত হেলাল মিয়ার স্ত্রী হালিমা বেগম (৪২) ছেলে সাইফুল ইসলামকে (২০) নিয়ে গ্রামের অদুরে একটি মেশিনে চাল ভাঙ্গাতে যান। রাত আনুমানিক ৭টার দিকে সেখানে মোঘলটুলা গ্রামের তৌহিদ মিয়া (২০) নামের এক যুবক হালিমা বেগমকে কটুক্তি করার অভিযোগ করেন। মাকে কটুক্তি করার প্রতিবাদ করে ছেলে সাইফুল ইসলাম। এক পর্যায়ে তৌহিদ ও সাইফুলের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে রাত ৮টার দিকে দুই গ্রামের কয়েকশত নারী পুরূষ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গ্রামীণ সড়কের উপর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রাতের অন্ধকারে তারা টর্চ লাইটের আলো জ্বালিয়ে চালায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রফিকুল হাসানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ও নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসাইন। রাত ৯টার দিকে ইটের আঘাতে ডান পায়ের নীচে আঘাত পান ইউএনও। ১০টার দিকে চোখের উপরের অংশে ইটের আঘাতে গুরূতর আহত হন ওসি। ইউএনও কে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে বাসায় প্রেরণ করা হয়। কিন্তু আঘাত গুরূতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ওসিকে রেফার করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে। ওসির ডান চোখের উপরে অস্ত্রোপাচার করতে হয়েছে। সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) তপন সরকার বলেন, ওসি রফিকুল হাসান ঘটনাস্থলে গুরূতর আহত হয়েছেন। উনাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত শফি আলী (৫৪), হাবিব মিয়া (৫৫) ও ইছাগ মিয়া (৫৬) নামের তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসাইন বলেন, অতিসম্প্রতি তেরকান্দা গ্রামে সংঘর্ষে তরতাজা এক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। বিষয়টি খুবই ব্যথিত করেছে। আমি বিষয়টি আদৌ মেনে নিতে পারিনি। তাই সংঘর্ষের ঘটনা শুনে দ্রূত ঘটনাস্থলে ছুঁটে গেলাম। সামান্য ও তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে এভাবে সময়ে অসময়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সংস্কৃতি সরাইলবাসীকে পরিহার করতে হবে। পরবর্তী প্রজন্মকে নৈতিক ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার দিকে টেনে নিতে হবে।