এনআইডি সংশোধন প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি কম

এফএনএস এক্সক্লুসিভ | প্রকাশ: ২ মে, ২০২৫, ০৮:২৬ এএম
এনআইডি সংশোধন প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি কম

জাতীয় পরিপত্র তথা এনআইডি সংশোধনের অধিকতর জটিল আবেদন নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা আগে শুধু আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও এনআইডি মহাপরিচালকের ছিল। তবে এখন এই ক্ষমতা পেয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারাও । ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ঝুলে থাকা চার লাখ এনআইডি সংশোধন সংক্রান্ত আবেদন ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। তবে কার্যক্রমের অগ্রগতি কম। তাই অধিকতর জটিল আবেদন (গ ক্যাটাগরি) মাঠ পর্যায়ে নিষ্পত্তির জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সমপ্রতি আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের সতর্কতার সঙ্গে গ ক্যাটাগরির আবেদন নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছিল ইসি। এক্ষেত্রে কেবল যে আবেদনগুলো তারা নিষ্পত্তি করতে পারবেন না বলে প্রতীয়মান হবে সেগুলো এনআইডি মহাপরিচালককে ফরওয়ার্ড করতে বলা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন জটিলতা ধরণ অনুযায়ী ক থেকে ঘ ক্যাটাগরি পর্যন্ত আবেদন ভাগ করে নিয়ে নিষ্পত্তি করে থাকে। এক্ষেত্রে আগামী জুন মাসের মধ্যে সকল ঝুলে থাকা আবেদন নিষ্পত্তির লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে আরও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে ইসি। এরমধ্যে একটি হলো, এনআইডি সংক্রান্ত্র আবেদন এখন থেকে আর ঢালাওভাবে নিষ্পত্তির জন্য বিবেচনা করবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে প্রবাসী, সরকারি চাকরিজীবী ও সাধারণ ক্যাটাগরিতে আবেদনগুলো বিন্যাস করে নিষ্পত্তি করা হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢালাওভাবে বিবেচনায় নিলে অনেক ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লেগে যায়। এই ব্যবস্থার ফলে যা সহজ হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সরকারি চাকরিজীবীদের সার্ভিস বুক থাকে। তাই তাদের আবেদনের সত্যতা সহজেই যাচাই করা যায়। আবার যারা প্রবাসী তাদেরও সংশ্লিষ্ট দেশের বৈধ কাগজপত্র ও পাসপোর্ট থাকে। এক্ষেত্রে আবেদনের চাহিত তথ্য আপডেট করতে যাচাইয়ের খুব একটা সময়ের প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে সাধারণ নাগরিকদের অনেকের আবেদনেই নানা অসততা থাকে। তাই আবেদনের ধরন প্রথমেই পৃথক করা গেলে নিষ্পত্তিতে সময় কম লাগে। এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর এ বিষয়ে বলেন, এখন থেকে তিনটি ছকে আবেদনগুলো পৃথক করা হবে। একটি প্রবাসীদের জন্য, অন্যটি চাকরিজীবীদের জন্য। আর একটি ছক হচ্ছে সাধারণ মানুষের জন্য। ইতোমধ্যে সকল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, এনআইডি সংশোধনের জটিল আবেদনের সিংহভাগই চাকরিজীবী আর প্রবাসীদের। এসব আবেদন নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াও অনেক জটিল। অনেক সময় দেখা যায় এগুলো নিষ্পত্তি করতে বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়। এতে যেমন আমাদের বদমান হয়, তেমনি ওই পরিবারগুলোরও ক্ষতি হয়। এজন‌্য একটা পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যেখানে চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে তালিকা নিয়ে তাদের সংশোধন করে দেওয়া এবং প্রবাসীদের ক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনা করে বিদেশি কাগজপত্রগুলো আমলে নিয়ে সংশোধন করা। এনআইডি সেবা সহজ করার জন‌্য আমরা কাজ করছি। তবে নানা কারণে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। আবার আমি যেভাবে পরিকল্পনা করছি, সেভাবে কাজগুলো হচ্ছে না। তারপরও অল্প অল্প করে এগিয়ে যাচ্ছি, হয়ত একটা সিদ্ধান্তে চলে আসব। এনআইডি সংশোধনে আমরা পজিটিভ থাকব। চাকরিজীবীদের এনআইডি সংশোধনের বিষয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, আমরা সবার সঙ্গে বসে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যে মন্ত্রণালয়ের সাথে এই কাজগুলো তাদের সঙ্গে আমরা বসব। আমরা তাদের কর্মকর্তা বা কর্মচারীরদের এনআইডিগুলো সংশোধন করে দেব। সবার সঙ্গে কথা হয়েছে, যেসব মন্ত্রণালয় এগুলোর সঙ্গে জড়িত অতি দ্রুত তাদের সঙ্গে আমরা একটা সভা করব। মন্ত্রণালয়ের কাছে সংশোধন করতে হবে এমন এনআইডির তালিকা চাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা তাদের বলব আপনাদের কতজন কর্মকর্তা যাদের এনআইডি সংশোধন করতে হবে, আপনারা দেন, আমরা এগুলো একসঙ্গে করে দেব। যাতে এগুলো নিয়ে আর ঘোরাঘুরি করতে না হয়। এখন থেকে যাতে এনআইডি ছাড়া চাকরি না দেওয়া হয় সেটিও তাদের কাছে অনুরোধ করব আমরা। প্রবাসীদের এনআইডি সংশোধনের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রবাসীদের ক্ষেত্রে সময়টা নির্দিষ্ট করব কি করব না সেটা আমি নিজেই বুঝতে পারছি না। আমি এটা নিয়ে সভা করে আলোচনা করেছি। কিন্তু আমি যেটা মনে করছি যেহেতু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রবাসীদের পাসপোর্ট সংশোধনের ক্ষেত্রে আট বছর পর্যন্ত শিথিল করেছে, সেক্ষেত্রে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আমাদেরও একটা কিছু করা দরকার। এটার জন‌্য আমরা একটা সভা করেছি। কিন্তু চূড়ান্ত কোনো ফলাফল আসেনি এখনো। এই কর্মকর্তা বলেন, আমার চিন্তা বা পরিকল্পনা হলো, প্রবাসীদের হাতের কাছে যে কাগজপত্র আছে, সেটি একটি নথি আর আমার কাছে যে নথিগুলো আছে সেটি একটি নথি। এখন প্রবাসীদের কাছে যে কাগজপত্রগুলো আছে তার ওপর ভিত্তি করে সংশোধনের প্রয়োজন হয়। সুতরাং আমরা চিন্তা করছি, ওখানে কী কী কাগজপত্র থাকলে আমরা বিবেচনা করতে পারব, কতদূর পর্যন্ত পারব, এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। তবে প্রবাসীদের বিদেশি কাগজপত্রকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের এনআইডি সংশোধন করা হবে, এই চিন্তা করছি। রাষ্ট্রের স্বার্থে, মানবিক কারণে হলেও প্রবাসীদের সংশোধন করে দেওয়াও জরুরি। এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, এনআইডি সেবা সহজ করার জন‌্য আমরা কাজ করছি। তবে নানা কারণে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। আবার আমি যেভাবে পরিকল্পনা করছি, সেভাবে কাজগুলো হচ্ছে না। তারপরও অল্প অল্প করে এগিয়ে যাচ্ছি, হয়ত একটা সিদ্ধান্তে চলে আসব। এনআইডি সংশোধনে আমরা পজিটিভ থাকব। জানা গেছে, ২০১১ সালের এক জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন লাখ ৭৮ হাজার এনআইডি সংশোধন আবেদন অনিষ্পন্ন ছিল, এর মধ্যে গত তিন মাসে ক্রাশ প্রোগ্রাম করে ৯৮ হাজার ৪৪টি আবেদন নিষ্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া, গত ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত আবেদন জমা পড়েছে তিন লাখ দুই হাজার ২৬৬টি, এরমধ্যে নিষ্পন্ন হয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৯২৬টি আবেদন। অবশিষ্ট আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এই হিসেবে ২০১১ থেকে এখন পর্যন্ত চার লাখ দুই হাজার ৩০৮টি আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে সকল অনিষ্পন্ন আবেদন নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। বর্তমানে দেশে ভোটার রয়েছে ১২ কোটি ৪৪ লাখের মতো। এদের অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্রে কোনো না কোনো ভুল থাকার কারণে প্রতিদিনই আবেদন জমা পড়ছে বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে