ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে গুনারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন দ্বিতল ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। গত ২৮ এপ্রিল সোমবার ওই ভবনের কক্ষের তালা সুরক্ষিত রেখেই ৭ টি বৈদ্যুতিক সিলিং ফ্যান চুরি হয়ে গেছে। আর ঠিকাদার বলছেন বলছেন যথাযথ পক্রিয়ায় হস্তান্তর করেছি। এ ঘটনায় গত ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার সরাইল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেওয়ান রওশন আরা লাকি। তবে প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যে ঘটনার নেপথ্যে রহস্যজনক কিছু আছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
জিডি, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ঠিকাদার কর্তৃক নির্মিত ওই স্কুল ভবনের কাজ প্রায় শেষ হলেও এখন পর্যন্ত কাগজে কলমে হস্তান্তর হয়নি। ওই ভবনে এখনো পাঠদানও শুরূ হয়নি। তালাবদ্ধ রয়েছে দ্বিতল ভবনের প্রত্যেকটি কক্ষ। তিনবারে ভবনের ৫টি তালার ১৫ টি চাবি প্রধান শিক্ষককে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তবে বিশেষ অনুরোধে (ছাদে ধান শুকানোর কথা বলে) দ্বিতল ভবনে প্রবেশের জন্য প্রধান ফটকের চাবি রেখেছেন জমি দাতা মো. আশকর আলীর কাছে। প্রধান শিক্ষক বলেন, ওই ভবনের কোন ফার্ণিচার নেই। তাই আমরা সেখানে পাঠদান শুরূ করতে পারিনি। অন্যান্য দিনের মত গত ২৮ এপ্রিল সোমবার স্কুল ছুটির পর আমরা সকলেই চলে যায়। তখন নতুন ভবনের সকল কক্ষেই তালা ছিল। ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার সাব-ক্লাষ্টার থাকায় বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক স্বল্পনোয়াগাঁও-এ অবস্থান করছিল। বেলা ১টার দিকে আশকর আলীর স্ত্রী শাহেদা বেগম (৪৮) প্রধান শিক্ষককে মুঠোফোনে জানান বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের দ্বিতীয়তলার দুই কক্ষে ৭ টি ফ্যান নেই। বাহিরের তালা ঠিকই আছে। তালাবদ্ধ অবস্থায় ভেতরে ফ্যান নেই আপনি দেখলেন কিভাবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহেদা বলেন, বাহির থেকে শুধু ফ্যানের ক্যাবল দেখা যাচ্ছে। জমি দাতা আশকর আলী বলেন, ভবনের প্রধান ফটকে আমি নিজের তালা দিয়েছি। ঘটনার সময় চাবিও আমার কাছেই ছিল। দরজায় তালা রেখে কিভাবে ফ্যান গুলি নিল বুঝলাম না। আমার স্ত্রী বারান্দা থেকে ভেতরে ফ্যানের ঝুলন্ত ক্যাবল দেখেছে। আপনার কাছে চাবি রেখে চোর বা আপনার স্ত্রী দ্বিতীয়তলায় গেল কিভাবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, পুরাতন ভবন থেকে নতুন ভবনে আসা যায়। ‘সিটি ট্রেড’ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাব-কন্ট্রাকটর মো. জীবন মিয়া বলেন, কাজ শেষ করে উপজেলা প্রকৌশলীকে নিয়ে হস্তান্তর করেছি অনেক আগেই। আমার কাজে ফার্ণিচার ধরা নেই। আমি চুড়ান্ত বিলও উত্তোলন করে ফেলেছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, যেখানে ভবনটি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবহারই করেননি। ওই ভবনের ছাদে ধান শুকানোর জন্য অন্যের দায়িত্বে কেন দেয়া হবে? প্রধান ফটকের চাবি যার কাছে তিনি দায় এড়াতে পারেন না। সকল কক্ষে তালা রেখে ফ্যান চুরির পেছনে অবশ্যই কোন ষড়যন্ত্র রয়েছে। ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া দরকার। বিদ্যালয়ের এসএমসি’র সভাপতি ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাইমা সাবরিনা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাটি সত্যই দু:খজনক। প্রকৃত পক্ষে চাবি যার কাছে থাকবে ঘটনার দায় তো তার উপরই বর্তায়।