আশাশুনি সদর হাটবাজার ও বিদ্যালয়ের নামে বন্দোবস্তে আবেদনকৃত খাস জমি পরিদর্শন

এফএনএস (জি.এম. মুজিবুর রহমান; আশাশুনি, সাতক্ষীরা) : | প্রকাশ: ৫ মে, ২০২৫, ০৮:২০ পিএম
আশাশুনি সদর হাটবাজার ও বিদ্যালয়ের নামে বন্দোবস্তে আবেদনকৃত খাস জমি পরিদর্শন

আশাশুনি সদরের হাট বাজার ও আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নামে বন্দোবস্তে জন্য আবেদনকৃত খাস জমি পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কৃষ্ণা রায়। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা সদরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রাচীরের মধ্যে জেলা পরিষদের নামীয় এ খাস জমি পরিদর্শন করা হয়। 

পরিদর্শনকালে ইউএনও কৃষ্ণা রায় জানান, গত ২২ এপ্রিল আশাশুনি সদরের হাটবাজার ও আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নামে বন্দোবস্তের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে দুটি আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে সরজমিনে জায়গাটি পরিদর্শন করেছি। আরও বিস্তারিত তদন্ত করে জেলা প্রশাসক স্যারকে অবহিত করবো।

আশাশুনি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রুহুল কুদ্দুস জানান, প্রতিবছর উপজেলা সদর সংলগ্ন ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি কিন্ডার গার্টেন থেকে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হয়ে আশাশুনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতো। কিন্তু বিগত ২০১৮ সালে হাইস্কুলটি জাতীয় করণ করা হলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে আসন সংখ্যা সীমিত হয়ে ১১০ আসনে পরিনত হয়েছে। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মাধ্যমিক স্তরের পড়ালেখা কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাদেরকে প্রতিদিন ৮-১০ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে চাম্পাফুল আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র বিদ্যাপীঠে যেতে হচ্ছে। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের দীর্ঘ এ পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যাওয়া যেমন কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল তেমনি সড়ক দুর্ঘটনার শঙ্কায় অভিভাবকদের মধ্যে সবসময় একটা অস্থিরতা বিরাজ করে। এতো দুরে রোদ, বৃষ্টি ও শীত উপেক্ষা করে ছেলেমেয়েরা যেতে চায় না। ফলে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী!র সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে‌‌। সে জন্য সদর এলাকায় একটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা অনিবার্য হয়ে পড়ে। বিষয়টি উপলব্ধি করে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের সহায়তায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আশাশুনি কিন্ডার গার্টেনে অস্থায়ীভাবে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করেছি। কিন্তু বিদ্যালয় স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার অভাব দূর করতে নির্দিষ্ট জমি প্রয়োজন। আশাশুনি সদরে বাজার সংলগ্ন আশাশুনি মৌজায় সিএস ৬ নং খতিয়ানের বিআরএস ১৯৯ নং খতিয়ানের ২৩৪১ ও ৭৫-৭৬ নং দাগের বিআরএস ১৭১ নং দাগ সহ অন্যান্য দাগ খতিয়ানে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের নামে প্রায় ২.০০ একর খাস জমি আছে জানতে পেরে আমরা স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য ১.৩৭ একর জমি বন্দোবস্ত পেতে আবেদন করেছি। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার স্বার্থে যাতে স্কুলের নামে জমি পেতে পারি সেজন্য যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

আশাশুনি সদর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মোঃ জাকির হোসেন প্রিন্স জানান, সদরের হাট বাজারের জন্য স্থায়ী কোনো জায়গা নেই। উপজেলা প্রশাসনের মৌখিক অনুমতি সাপেক্ষে আমরা দীর্ঘ দিন ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর অফিস সংলগ্ন এলাকায় আপনার অধীনস্থ আশাশুনি মৌজার ৪৯৭ নং এস এ খতিয়ানে যার বিআরএস ১৯৯ নং খতিয়ানের এসএ ৭৫ ও ৭৬ দাগের বিআরএস ১৭১ নং দাগে প্রায় ১ একর সরকারি খাস সম্পত্তির উপর অস্থায়ীভাবে সাপ্তাহিক হাট বাজার বসিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। কিন্তু বর্ষা মৌসুমের কাদা পানিতে ক্রেতা ও বিক্রেতার ভোগান্তি চরমে পৌঁছে যায়। বৃষ্টি নামলেই ক্রেতা বিক্রেতা যেমন ভিজে জেরবার হয় তেমনি ভাবে তাদের মূল্যবান মালামাল নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এতে করে বড় কোন ব্যবসায়ী আমাদের হাটে বাজারে আসতে চায় না। ফলে আশাশুনি বাজার তার জৌলুস হারিয়ে ফেলছে। বাজার চান্নির জায়গা এতো ছোট যে সেখানে কোন রকমে নিত্যদিনের বাজারটা চলতে পারে। সেখানে পশু জবাইয়ের জায়গা নেই, আলাদা মাছ বাজার, তরকারি বাজার নেই। উপজেলা সদর বাজারে মাত্র ১০টি স্থায়ী মুদী ব্যবসায়ী ব্যবসা করে থাকেন। ৭ টি ছোট বড় কাঁচা তরকারি দোকান। যেটা খুব হতাশার এবং দুঃখজনক। এরমধ্যে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সরকারি পেরি ফেরি ভুক্ত খাস জমি উদ্ধারের নামে শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুড়িয়ে দেওয়ায় সদরের মানুষ কিছুটা হলেও ব্যবসা বিমুখ হয়ে যায়। রাত ৯টা বাজার আগেই বাজার কার্যত অন্ধকার হয়ে পড়ে। তাই বাজারের প্রসার ঘটাতে, ক্রেতা বিক্রেতাদের ভোগান্তি লাঘব এবং ব্যবসায়ে আগ্রহীদের সুযোগ করে দিতে বাজার চান্নির স্থায়ী জায়গা বরাদ্দ এখন সময়ের দাবি। সদরের মানুষের জনদাবির প্রেক্ষিতে স্থায়ী হাট বাজার নির্মাণের জন্য ‌‌ খাস জমি বন্দোবস্ত পেতে আমরা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট আবেদন করেছি। 

এ ব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের আমির আবু মুছা তারিকুজ্জামান তুষার সাংবাদিকদের জানান, আশাশুনিতে একটি হাইস্কুল ও হাট বাজারের জন্য জমির প্রয়োজন। অতীতে শিক্ষানুরাগী বা প্রগতিশীল চিন্তাধারার মানুষেরা আশাশুনির উন্নয়নে নিজস্ব জমি দানে এগিয়ে এলেও এখন জমি দাতা পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। তাই সরকারি খাস জমিতে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বিকল্প নেই। তাই বিষয়টি আমলে নিয়ে স্কুল ও হাটবাজার স্থাপনে সরকারি জমি ইজারা প্রদানের জন্য জোর সুপারিশ করছি।

পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন আশাশুনি প্রেসক্লাবের সভাপতি জি এম আল ফারুক, ওএস আব্দুর রহিম, জামায়াতের যুব নেতা ডাঃ রোকনুজ্জামান, ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ মোড়ল সহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে