রেলের জমি দখল: রক্ষকের ছায়ায় ভক্ষকের দৌরাত্ম্য

মোহাম্মদ আমিন; ঢাকা | প্রকাশ: ৬ মে, ২০২৫, ০৪:২১ পিএম
রেলের জমি দখল: রক্ষকের ছায়ায় ভক্ষকের দৌরাত্ম্য

বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পদ আজ নিরাপদ নয়। যার হাতে দায়িত্ব, তিনিই যদি দায়িত্বহীনতার ছায়ায় অপরাধে মদদ দেন—তাহলে কীভাবে রক্ষা পাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ? সম্প্রতি নাটোর, সান্তাহার, আত্রাই ও আশপাশের এলাকায় রেলওয়ের সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল ও মাটি ভরাট করে মার্কেট ও স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রেলওয়ের কিছু কর্মকর্তা, যাদের আসল কাজ ছিল এসব সম্পদ রক্ষা করা।

গত ২৩ মার্চ নাটোরের নলডাঙ্গারহাট থানায় রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারি প্রকৌশলী আব্দুর রহমান একটি মামলা দায়ের করেন। এতে আত্রাইয়ের স্টেশন মাস্টার রহিদুল ইসলামসহ স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে রেলওয়ের জমি দখল ও মাটি ভরাটের অভিযোগ আনা হয়। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন মজিবর রহমান, উত্তম কুমার, মোস্তফা, সাবেক চেয়ারম্যান মো. ভট্টু এবং আবু বক্কর।

অন্যদিকে, মাধবনগর স্টেশনের জমিতে অনুমতি ছাড়াই স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় রানা সরদারের বিরুদ্ধে। মামলা হওয়ার পরও এসব কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, আত্রাইয়ের স্টেশন মাস্টার রহিদুল ইসলাম ও ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (সাবেক) নূরুজ্জামান এই চক্রের পৃষ্ঠপোষক। নূরুজ্জামানের সময়ে (২০১৯–২০২৪) জলাশয় ও পুকুরকে কৃষিজমি হিসেবে দেখিয়ে লিজ দেওয়া হয়। এতে সহায়তা করেন অফিস সহকারী জাবের, পিয়ন অলিভ হোসাইন, প্রধান সহকারী সাহেব আলি এবং বিভিন্ন স্টেশনের কানুনগোরা।

বর্তমান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো মাটি ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণে মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) প্রকৌশলী মো. আফজাল হোসেন এফএনএসকে বলেন, “দোষী যে-ই হোক, সে রেলের ভেতরের লোক হোক বা বাইরের, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।” তিনি আরও জানান, “জিএমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জমির লাইসেন্স সংক্রান্ত জালিয়াতি তদন্তের জন্য। দোষীদের দপ্তর বদলি ও কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তিনি বলেন, “চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কিছু কর্মকর্তা অপরাধ করেও অনেক সময় পার পেয়ে যায়। এবার তাদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে।”

উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান বলেন, “ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে ফিরে দেখি, রেলের জমিতে দোকানপাট এমনকি বাড়ি তৈরি হয়ে গেছে।” তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা অভিযানের নেতৃত্বে থাকার কথা, অথচ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। ফলে বাধ্য হয়েই আমরা রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী আরএনবিকে নিয়ে অভিযান চালাচ্ছি।”

তিনি আরও জানান, “নলডাঙ্গায় অভিযান চালিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। পুলিশকেও সহযোগিতায় পাওয়া যাচ্ছে না।”

নলডাঙ্গারহাট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনোয়ার জাহান জানান, মামলার বিষয়ে তার কোনো তথ্য নেই। এমন অবস্থায় জনমনে প্রশ্ন জাগছে—রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিরাপত্তা কোথায়? প্রশাসন কেন নীরব?

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে