খুলনা ওয়াসায় জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে সরদার মো. সাইফুল ইসলাম নামে একজনকে বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি থেকে ফোরম্যান পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু চার মাসের বেশি সময় পার হলেও তদন্ত রিপোর্ট এখনও আলোর মুখ দেখেনি। ফলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এদিকে, একদিকে অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি, অন্যদিকে ওয়াসার মালামাল চুরির সঙ্গে জড়িত থাকায় জরিমানার দণ্ডপ্রাপ্ত এবং সম্প্রতি ওয়াসা কর্মচারি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের ওপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি হলেও অভিযুক্ত সরদার মো. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের এ ধরণের রহস্যজনক নিরবতায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
‘খুলনা ওয়াসায় জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি থেকে ফোরম্যান পদে পদোন্নতি, বাতিলের দাবিতে লিখিত অভিযোগ’ করা হয়।
যার সূত্র ধরে ২৩ ডিসেম্বর ওয়াসার সচিব প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসকে আহবায়ক এবং নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মো. রেজাউল ইসলামকে সদস্য করে ২ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এর আগে গত বছরের ১ অক্টোবর ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর দাখিলকৃত লিখিত অভিযোগে সহকারী অপারেটর মো. শাহাদাৎ শিকদার উল্লেখ করেন, ২০১৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী ফোরম্যানের পদটি শূণ্য ছিল। ফোরম্যান পদে পদোন্নতি পাওয়ার প্রয়োজনীয় সকল যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকায় তিনি শূণ্য পদের বিপরীতে আবেদন করেন। কিন্তু ওয়াসা কর্তৃপক্ষ তার আবেদনটি আমলে না নিয়ে তার চেয়ে অভিজ্ঞতায় ১১ বছরের জুনিয়র সরদার মো. সাইফুল ইসলামকে পতিত আওয়ামীলীগ নেতা ও কেসিসির অপসারিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের মাধ্যমে অনৈতিক ভাবে পদোন্নতি দেয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, সরদার মো. সাইফুল ইসলামের কারিগরি সনদসমূহ নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয়কৃত। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড চার বছরের কম ডিপ্লোমা সনদ প্রদান করে না। অথচ ফোরম্যান মো. সাইফুল ইসলাম ছয় মাসের ডিপ্লোমা সনদ প্রদান করেন। যা ভুয়া এবং নকল সনদ বলে প্রতিয়মান হয়। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে বর্ণনা দিয়েছেন, যার অস্তিত্ব পূর্বেও ছিল না, বর্তমানেও নেই।
আরও উল্লেখ করা হয়, ফোরম্যান সরদার মো. সাইফুল ইসলাম গত ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী ওয়াসার বাবুস সালাম মসজিদ পাম্প এর মালামাল খোয়া যাওয়ার বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দোষি সাব্যস্ত হন। একারনে শাস্তিস্বরূপ তাকে ৬ হাজার ৭০৯ টাকা জরিমানা করা হয়। যা তিনি ২০১৯ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারী ওয়াসার তহবিলে জমা করেন। এছাড়া উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগে খুলনা পানি সরবরাহ ও পয়নিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি প্রবিধানমালা ২০১৪" অনুযায়ী কেন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার কারণ দর্শাতে ৭ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি নির্দেশ অমান্য করে লিখিত জবাব প্রদান করেননি। তারপরও কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন প্রকার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অভিযোগকারী মো. শাহাদাৎ শিকদার বলেন, তিনি নিয়ম মেনে কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যায় বিচার চেয়ে আবেদন করেছেন। এবিষয়ে কর্তৃপক্ষ গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পরবর্তিতে তদন্ত কমিটি গত ৪ মার্চ তাকে অফিসে ডেকে শুনানী গ্রহণ করেন। যার ১ মাস অতিবাহিত হলেও তিনি কোন সুরাহা পাননি। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যায় বিচার দাবি করেন।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও ওয়াসার সচিব প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে বলে স্বীকার করে বলেন, এখনও কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট দাখিল করা হয়নি। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে কিনা অথবা কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে ধারণা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
এ বিষয়ে খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. হুসাইন শওকত বলেন, এ ধরনের একটি অভিযোগের তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে তার নলেজে রয়েছে। তবে তদন্ত রিপোর্ট তিনি পাননি। তদন্ত রিপোর্ট কেন বিলম্বিত হচ্ছে বিষয়টি সচিবের কাছে তিনি জানতে চাইবেন বলেও উল্লেখ করেন।