ব্যবসা-বিনিয়োগে মন্দা

আস্থার পরিবেশ ফেরাতে হবে

এফএনএস | প্রকাশ: ৮ মে, ২০২৫, ০৭:৩৯ পিএম
আস্থার পরিবেশ ফেরাতে হবে

দেশে ব্যবসা-বিনিয়োগে এক ধরনের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। গ্যাসের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। রয়েছে ডলার সংকট। কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েক শ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ধুঁকছে অনেক কারখানা। অনেক কারখানা নিয়মিত বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। বাড়ছে শ্রম অসন্তোষ। উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণনে ধীরগতি তৈরি হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ। আর এসবের প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আয়ে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ঘাটতি ছাড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। স্বাধীনতা-উত্তরকালে এই ভূখণ্ড রীতিমতো একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। সেই অবস্থায় দেশপ্রেমিক উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। অর্ধশতাব্দীর বেশি সময়ে অনেক কষ্ট ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে তাঁরা দেশে শিল্পায়নের একটি শক্তিশালী ভিত তৈরি করেছেন। কিন্তু সেসবই আজ হুমকির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে বলে উদ্যোক্তা ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। তাঁদের মতে, সামগ্রিকভাবেই দেশে শিল্প খাতে পরিবেশের অবনতি হচ্ছে। ফলে দেশীয় উদ্যোগ যেমন কমছে, তেমনি কমছে বিদেশি বিনিয়োগ। এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে শিল্প খাতের বিকাশ তো দূরের কথা, অস্তিত্ব নিয়েই সংকট তৈরি হতে পারে। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় তা কমিয়ে চার লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়। সে হিসাবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বছরে ৩৬৫ দিনের প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ২৭০ কোটি টাকা আদায় করতে হতো। প্রথম ৯ মাসে আদায়ের ক্ষেত্রে বিরাট রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। গত ৯ মাসে এক হাজার ৫৪৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। এরই মধ্যে বাংলাদেশের পরবর্তী দুই বছরের প্রবৃদ্ধি হ্রাসের সংকেত দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গবেষণা বলছে, আমদানির ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্টের আরোপ করা শুল্ক কার্যকর হলে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ০.৩ শতাংশ কমে যেতে পারে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমতে পারে ০.৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের যে আশঙ্কা করছেন, তা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। বেসরকারি খাতের বিকাশ ত্বরান্বিত করতে নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে।