দিনাজপুরে বিভিন্ন নদী থেকে অবৈধভাবে ভেকু দিয়ে বালু উত্তলন

এফএনএস (জি.এম.হিরু; দিনাজপুর) : | প্রকাশ: ১২ মে, ২০২৫, ০৬:৪০ পিএম
দিনাজপুরে বিভিন্ন নদী থেকে অবৈধভাবে ভেকু দিয়ে বালু উত্তলন

দিনাজপুর জেলার পুনর্ভবা, ঢেপা, আত্রাই, কাকরা নদীসহ বিভিন্ন নদী থেকে অনিয়মতান্ত্রিক- অবৈধভাবে দেদার্সে বালু উত্তোলন চলছে। 

সরেজমিনে জানা যায়, জেলার খানসামা উপজেলায় জিয়া সেতুর পার্শ্বে অমরপুর ইউনিয়নের কইল্লাবাড়ী জনৈক বিএনপি নেতা আক্কাস আলী, রবিউল, তুহিন কালির ঘাটের রুবেল ইসলাম, আত্রাই নদীর শাখা কান্তর নগর সংলগ্ন ঢেপা নদী, বাধগা ব্রীজের পার্শ্বে ঢেপা নদী থেকে ভেকু দিয়ে উত্তোলন করে অবৈধভাবে তোফাজ্জল ও সিদ্দিক আলী , কাহারোল উপজেলার ৬নং ও ৯নং ওয়ার্ডের ঘাট থেকেও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ ভেকু দিয়ে বালু উত্তোলন করে নিষিদ্ধ জাম ট্রাক ও ট্্রলি দিয়ে দিন রাত শহরে বালু সরবরাহ করা হচ্ছে। অথচ প্রশাসন নীরব। দিনাজপুর সদর উপজেলার চুতিয়ার মোড় নামক স্থানেও খোঁজ নিয়ে জানা যায় রাতের বেলা অহরহ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে সরকার লক্ষ লক্ষ টাকার রজাস্ব হারাচ্ছে। 

জাম ট্রাক ও ছোট ট্রলি দিয়ে দিন রাত এই স্পট গুলো হতে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। দিনাজপুর সদরের সিটি পার্কের পার্শ্বে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে। উল্লেখ্য সরকারি ডাক করা বালু উত্তোলনে অনেক নিয়ম কানুন থাকে অথচ নিয়ম কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে দিনে রাতে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। 

এদিকে দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের কাকড়া নদীর করলা বাড়ি ঘাট এলাকায় অবৈধ পয়েন্ট সৃষ্টি করে নদীর তলদেশ থেকে ভেকুর সাহায্যে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালু দস্যুরা দীর্ঘ এক মাস যাবত বালু উত্তোলন করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ১২ মে (সোমবার) বেলা ১২টায় সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। তাদের ভাবখানা এমন, যেন দেখার কেউ নেই।

এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত এই অবৈধ বালুর পয়েন্টের অন্যতম একজন কর্ণধার ইউপি সদস্য আশিকুল জানান, এই পয়েন্টের সঙ্গে চিরিরবন্দর উপজেলা বিএনপি'র সভাপতির ছেলে নূর আলম, ৭নং ইউনিয়ন বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক সেলিম শাহ সহ ৭ থেকে ৮ জন বিএনপি নেতা জড়িত। এখানে ৪০ থেকে ৫০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। পয়েন্টটি এখন অবৈধ হলেও অল্প সময়ের মধ্যে এর বৈধতা পাবে। এসময় তিনি সংবাদ কর্মীদের নিউজ না করবার জন্য ম্যানেজ করবার অপচেষ্টা করেন। 

এছাড়াও জানা গেছে, ৭নং ইউনিয়ন বিএনপি'র সভাপতি উজির শাহ ও একই ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন এই অবৈধ বালু মহালের নেপথ্যের কুশীলব। বিষয়টি তৎক্ষণাৎ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে অবগত করলে তিনি বলেন, সেখানে কোন বৈধ্য বালুর পয়েন্ট নেই। যারা এই অবৈধ কর্মযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সংবাদ কর্মীদের তিনি আশ্বস্ত করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি জানান, সেখানে নদীর তলদেশে একটি ভেকু জব্দ করা হয়েছে। পরবর্তীতে যাতে এই অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা বালু উত্তোলন করতে না পারে সেজন্য সেখানে পাহারায় রাখা হয়েছে গ্রাম পুলিশ সদস্যদের। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর অভ্যন্তরে তৈরি হয় বড় বড় খাদ। বর্ষাকালে নদীঘাট এলাকায় বালু উত্তোলনের ফলে পথগুলো বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে। পরবর্তীতে সেইসব গর্তে ডুবেই মানুষের মৃত্যু হতে পারে। শুধু কি তাই নদী থেকে অবৈধভাবে যত্রতত্র বালু উত্তোলনের কারণে নদীর ব্যাপক ক্ষতি হয়। অনিয়ন্ত্রিতভাবে নদী থেকে বালু ও মাটি উত্তোলনের কারণে নদীর তলদেশ ক্রমশ ভেঙে যাচ্ছে। এর ফলে নদীর নাব্যতা কমছে ও নদীর তীর ধসে যাচ্ছে। অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধে সরকার বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নিলেও বেশিরভাগ জায়গায় প্রশাসন একেবারেই নীরব। অবৈধ বালু তোলার পেছনে রয়েছে একটি শক্তিশালী চক্র। এই চক্রের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী, ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতারা। তারা অবৈধ বালু তোলার মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হলেও সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে