প্রেম ঘটিত একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলার সদর উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের ১ ও ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ নেতারা সংখ্যালঘু একটি পরিবারের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। টাকা নেয়ার একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, সদর উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের পুরানা কাচারী ক্লিনিকের বাজার এলাকার রাজমিন্ত্রী স্বরৎ কুমারের ছেলে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র আশিক রায় এবং ১ নং ওয়ার্ডের মিলবাজার এলাকার মুসলমান পরিবারের ৭ম শ্রেণীর এক মেয়ে (নাম প্রকাশ করা হলো না) গ্রামের এক শিক্ষকেরর কাছে প্রাইভেট পড়ত। একই সঙ্গে প্রাইভেট পড়ার সুবাদে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত ৬ মে সকালে মেয়েটি বিয়ের দাবীতে আশিকের বাড়ীতে যায়। দুপুর ২টার দিকে মাসুম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি মেয়েটিকে সেখান থেকে মোটরসাইকেলে নিয়ে তার পিতার কাছে পৌছে দেন। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ঘটনাটি নিয়ে আর যেন বাড়াবাড়ি না হয় এ জন্য এলাকাবাসীকে অনুরোধ জানান মেয়ের পিতা।
এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতারণার ফাঁদ তৈরী করে ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হক, ২নং ওয়ার্ডের যুবলীগের সেক্রেটারী আজহারুল ইসলাম (আজাউ), ২নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি বাচ্চাউ ও শ্রমিকলীগ নেতা হোসেন। তারা ছেলের পরিবারকে মামলা, হামলাসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাদের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবী করেন এবং এই টাকা মেয়ের পরিবারকে দিতে হবে, তা না হলে মেয়ের পরিবার তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে।
তাদের নানা হুমকি-ধুমকি ও ছলচাতুরির ফাঁদে পড়ে ছেলের পিতা ২ লক্ষ টাকা দিতে রাজী হয়। ওই দিনেই তাদের ৫০ হাজার ও পরের দিন (৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বাকী দেড় লাখ টাকা দেয়া হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই গ্রামের এক ব্যক্তি বলেন ভয়ে গরু বিক্রি ও জমি বন্ধক দিয়ে টাকা এনে আওয়ামী লীগ নেতাদের দেন ছেলের বাবা। ক্লিনিকের বাজার এলাকার পরেশ রায়ের বাড়ীতে সেই টাকা লেনদেন হয় এবং সেখানে বসেই তারা টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেন। সেখানে পরেশকে মেয়ের পরিবারের লোক সাজিয়ে মোবাইলে ছেলের পরিবারের সাথে কথা বলানো হয়।
এদিকে ৭্ এপ্রিল রাতে আওয়ামী লীগ নেতাদের টাকা লেনদেনের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অডিওতে শোনা যাচ্ছে এক ব্যক্তি ছেলের বড় বোন পলি রানীকে জিজ্ঞেস করছে কত টাকা দিয়েছেন এবং কাকে টাকা দিয়েছেন। মেয়েটিকে বলতে শোনা যাচ্ছে প্রথমে ৫০ হাজার পরে দেড় লাখ টাকা আব্দুল হক ও আজাউ ( আজহারুল) বাড়ীতে এসে টাকা নিয়ে গেছে। এ ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ার পরেই স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে ছেলের বাড়ী গিয়ে দেখা যায় তাদের বাড়ীর প্রধান দরজায় তালা লাগালো। স্থানীয়রা জানায় ঘটনার পর থেকেই বাড়ীতে তালা দিয়ে পরিবারের সবাই কোথায় যেন চলে গেছে।।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আওয়ামী ও যুবলীগের নেতাদের মোবাইলে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে কেউ মোবাইল রিসিভ করেনি এবং এলাকায়ও তাদের পাওয়া যায়নি।
পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি ময়নুল ইসলাম জানান, ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা গা ঢাকা দিয়েছে। কিন্তু ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের অনেক নেতা পূর্বের ন্যায় এখনও চাঁদাবাজি ও মানুষের সাথে বিভিন্ন ভাবে প্রতারণা করে যাচ্ছেন। এব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।