বিষাক্ত আগাছা নাশক ছিটিয়ে ধান নষ্ট, কাঁদছেন কৃষক পরিবার!

এফএনএস (সরকার আবদুর রাজ্জাক; বকশীগঞ্জ, জামালপুর) : | প্রকাশ: ১৩ মে, ২০২৫, ০৩:৫১ পিএম
বিষাক্ত আগাছা নাশক ছিটিয়ে ধান নষ্ট, কাঁদছেন কৃষক পরিবার!

পৃর্ব শত্রুতার আক্রোশে বকশীগঞ্জে এক কৃষকের ধান খেতে আগাছা নাশক বিষ দিয়ে ধান নষ্ট করার এক অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। 

এক বার নয় দু বার নয় টানা পাঁচ ফসলই বিষাক্ত আগাছা নাশক ছিটিয়ে নষ্ট করা হয়েছ বলে জানা গেছে।গত দুই বছর ধরে  উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারেন নি কৃষক আতোয়ার হোসেন। সেই কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে এবারও তিন বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন তিনি। এবারও শেষ রক্ষা হয়নি। ধান পাকার অপেক্ষায় ছিল আতোয়ারের পরিবার। স্বপ্ন ছিল এবার ধান কেটে বাড়িতে নিতে পারবেন। কিন্তু বাঁধ সাধে পুরনো শকুনের সেই পৃর্ব শত্রুতার বহিপ্রকাশ। ওই শত্রুতার গ্যাড়াকলে পরে প্রান্তিক চাষী আতোয়ারের জীবন জীবিকা এখন দূর্বিসহ হয়ে পড়েছে।  এবারও আগাছা নাশক ছিটিয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে তার তিন বিঘা জমির ধান। মঙ্গলবার ৬ মে রাতে কে বা কারা তার তিন বিঘা জমির ধান ক্ষেতে বিষাক্ত আগাছা নাশক বিষ ছিটিয়ে দিয়েছে । এর পরদিন থেকেই মরতে শুরু করে ওই ধান ক্ষেতটি। দুই দিন না যেতেই স্পষ্ট হয়ে উঠে বিষাক্ত আগাছা নাশকের ক্ষতের চিহ্ন। 

ঘটনাটি ঘটেছে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বগারচর ইউনিয়নের বালুরচর গ্রামে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধার দেনা করে চলতি বোরো মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন ক্ষুদ্র কৃষক আতোয়ার হোসেন। কিন্তু প্রতিবারের ন্যায় এবারও সেই জমিতে বিষাক্ত কিট নাশক ছিটিয়ে নষ্ট করা হয় তার ধান ক্ষেত। মঙ্গলবার (৬ মে) গভীর রাতে কে বা কারা এসব আগাছা নাশক ছিটিয়েছে। এরপর থেকে সোনালী ধান ক্ষেত। মরে বিবর্ণ রূপ ধারণ করে। দুই দিন পরই ওই ধান খেত মরে সাদা বিবর্ণ হয়ে উঠে। ধান ক্ষেতটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে পড়লে হতাশা দেখা দেয় কৃষক আতোয়ারের পরিবারে। এমন অমানবিক ঘটনায়  ক্ষোভ দেখা দেয় পুরো এলাকার মানুষের মধ্যে। 

 ওই ধান ক্ষেতের পাশে বসে ডুকরে ডুকরে কাঁদেছেন আতোয়ারের স্ত্রী তাসলিমা বেগম। 

এই তিন বিঘা জমি চাষ করেই বাবা, স্ত্রী,তিন সন্তান নিয়ে কোন রকম সংসার চালান আতোয়ার। এখন কিভাবে সংসার চালাবেন সেই চিন্তায় সময় কাটছে তার। একে একে পাঁচ বার ফসল নষ্ট করায় কৃষক আতোয়ারের চোখে মুখে এখন শুধুই হতাশার ছাপ। গত দুই বছরে এক টাকার ফসলও ঘরে তুলতে পারেন নি তিনি। অথচ দিন রাত পরিশ্রম করেছন সোনালী ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু মানুষরূপী অমানুষরা সেই স্বপ্নকে ধুলিসাত করে দিয়েছে। 

কৃষক আতোয়ার হোসেন জানান, গত দুই বছর ধরে আমার জমির পাঁচটি ফসলে এভাবেই বিষ দিয়ে নষ্ট করা হয়েছে। আমার বাড়ির সামনে থেকে গরু চুরি করা হয়েছে। দুই বছরে আবাদ করতে গিয়ে দুই লাখ টাকার ঋণ গ্রস্ত হয়েছি। ফসল গুলো ঘরে তুলতে পারলে পরিবার নিয়ে বাঁচতে পারতাম। এখন কি করব বুঝতি পারছি না। 

স্থানীয় বালুরচর গ্রামের ফুলু মিয়া, গুলজেহার আলী,নবী হোসেন , কালাম মিয়া জানান, আতোয়ার একজন গরিব কৃষক। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। কিন্তু দুবৃর্ত্তের প্রতি হিংসার আগুনে নি:স্ব হয়ে পড়েছেন আতোয়ার হোসেন। তার সাথে যে অমানবিক শত্রুতা করা হচ্ছে  তা খুবই বেদনা দায়ক ঘটনা। আমরা  এই ঘটনার  বিচার চাই। 

আতোয়ারের স্ত্রী তাসলিমা বেগম জানান, আমরা গরিব মানুষ। আমাদের রিজিকের উপর কেন হামলা করা হলো। আমার সন্তানদের কি খাওয়াবো এখন। এর বিচার চাই। 

বকশীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম জানান, কৃষক আতোয়ারের সাথে জঘন্য কাজ করা হয়েছে। এটা একটা ফৌজদারী অপরাধ। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে ধান ক্ষেতটি পরিদর্শন করা হয়েছে। যেকোন সহযোগিতা ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে কৃষক আতোয়ার কে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করবে উপজেলা কৃষি বিভাগ। 

এঘটনার বিচার চেয়ে শনিবার (১০ মে) বিকালে বকশীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আতোয়ার হোসেন। 

বকশীগঞ্জ থানার ওসি খন্দকার শাকের আহমেদ জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক ও হৃদয় বিদারক। এঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে