অপহরণ করে হত্যা: সিরাজগঞ্জে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড

সিরাজগঞ্জে অপহরণ করে সবজি ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলামকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এম আলী আহমেদ এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় সব আসামিই পলাতক ছিলেন।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) নওগাঁর চকগৌরী হাট থেকে ট্রাকভর্তি সবজি নিয়ে ঢাকার বাইপাইলের আড়তে যাচ্ছিলেন নাজমুল ইসলাম (২৫)। সন্ধ্যায় স্ত্রী রাবেয়া খাতুনকে ফোনে সবজি পৌঁছানোর খবর দিলেও এরপর থেকে তার সঙ্গে পরিবারের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।

পরদিন শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাত ১২টার দিকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন করে জানায়, নাজমুলকে গাজীপুরের চান্দুরা থেকে কালো মাইক্রোবাসে করে অপহরণ করা হয়েছে এবং মুক্তিপণ হিসেবে চাওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা। এরপর আরও একাধিকবার পরিবারের কাছে টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু মুক্তিপণ না পেয়ে তাকে হত্যা করে অপহরণকারীরা। শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানাধীন হাটিকুমরুল এলাকার রূপসী বাংলা হোটেলের পাশে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মাথায় ছিল গভীর আঘাতের চিহ্ন।

মৃত্যুর পরদিনই নিহতের বাবা আব্দুর রহমান বাদী হয়ে সলঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও তদন্তে পাওয়া অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। বিচার চলাকালে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম মারা যান, ফলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি হলেন:

১. গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পারধুন্দিয়া গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে খাজা মিয়া

২. একই গ্রামের হায়দার আলীর আরেক ছেলে বসু মিয়া

৩. হরিনাথপুর বিষপুকুর গ্রামের মৃত ময়েজ উদ্দিনের ছেলে এনামুল হক

৪. দরগাপাড়া গ্রামের মৃত মজিবর শেখের ছেলে মোজাহিদ শেখ

৫. মাদারদহ পূর্বপাড়া গ্রামের আব্দুর রহমান প্রধানের ছেলে সাইদুল ইসলাম

৬. সাঘাটা উপজেলার রামনগর (হাটবাড়ি) গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মিলন সরকার

আদালত তাদের প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন পিপি অ্যাডভোকেট রফিক সরকার এবং আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ।

রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছে, চাঞ্চল্যকর এই মামলার যথাযথ বিচার হয়েছে। তবে আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন নিহত নাজমুলের পরিবার।