শ্রবণশক্তি হারাচ্ছেন অধিকাংশ: শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি

সম্পাদকীয়
| আপডেট: ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৫:৫৯ এএম | প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৫:১০ এএম
শ্রবণশক্তি হারাচ্ছেন অধিকাংশ: শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি

আমাদের দেশে প্রতিবছর উচ্চ শব্দদূষণে শ্রবণশক্তি হারাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় শব্দের মাত্রা বেশি। এক দিকে রাজধানীতে জনসংখ্যা অধিক বসবাস করে অন্যদিকে উচ্চ শব্দদূষণ। যার ফলে রাজধানীতে শ্রবণশক্তি হারানোর সংখ্যাও বেশি।  ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনইপি)-এর এনুয়াল ফনট্র্রেটিয়ার রিপোর্ট ২০২২ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ঢাকা সবচেয়ে উচ্চশব্দের শহর। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সহনীয় শব্দের মাত্রা যেখানে ৫৫ ডেসিবেল সেখানে ঢাকার বেশ কিছু জায়গা এ মাত্রা সহনীয় মাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ। তা ১১০-১৩২ ডেসিবল। এর ফলে শহরের বেশির ভাগ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শব্দদূষণের কারণে ঢাকার পথচারী, গাড়িচালক রিকশাচালক ও ট্র্যাফিক পুলিশসহ যারা সড়কে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সময় সড়কে কাটাচ্ছেন তাদের অনেকেই শ্রবণশক্তি তথা কানে কম শোনার সমস্যায় ভুগছেন। শব্দদূষণ এখন এতই মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শব্দদূষণের শিকার গর্ভজাত মায়েদের নবজাতকও অটিজমে আক্রান্ত হয়ে জন্ম নিচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে এতে আত্মহত্যার প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মানসিক অবসাদগ্রস্ততা ও বিষণ্নতা বাড়ছে। রাতে ঘুম কম হচ্ছে। সব মিলিয়ে মানুষের কর্মক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। ‘নয়েজ পলিউয়েশন ইন ঢাকা; কারেন্ট সিচুয়েশন অ্যান্ড সাজেশনস ফর অ্যাকশন’ শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা যায়, শব্দদূষণের কারণে ৭৮ শতাংশ মানুষ উত্তেজনা বোধ করেন। ৭১ শতাংশের মাথাব্যথা, ৪৯ শতাংশ খারাপ মেজাজের শিকার, ৪৩ শতাংশ অমনোযোগ এবং নিদ্রাহীনতায় ভোগেন। ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর উচ্চ হর্নের কারণে লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে সমস্যা হয়। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ হিসেবে এরই মধ্যে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের ৩ কি.মি. এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করা হয় এবং গত ১ অক্টোবর থেকে যানবাহনে হর্ন বাজানো বন্ধ করার কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু গাড়ির চালকরা এরপরও এ এলাকায় ক্রমাগত হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছেন। কেউই নিয়ম মানছেন না। এর আগেও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ঢাকার যেসব এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করা হয় সেখানেও নির্ধারিত সীমার চেয়ে দ্বিগুণ মাত্রার উচ্চ শব্দ ছিল। সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, প্রথমে মানুষকে সচেতন করা হবে। এরপর আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হবে। প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে, পরে পুরো ঢাকা শহর এবং ধীরে ধীরে বিভাগীয় শহরগুলোতেও শব্দদূষণ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমরা তার এমন উদ্যোগী হওয়ার চিন্তা ধারাকে সাধুবাদ জানায়। এখন প্রত্যাশা উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন রূপ দেখা। শব্দদূষণ শুধু শ্রবণশক্তির ক্ষতিই করছে না এটি হৃদরোগীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ঢাকার অনিয়ন্ত্রিত যানজট, গাড়িচালকদের সচেতনতা ও শিক্ষার অভাব এবং এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নমনীয় অবস্থান শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে না আসার অন্যতম কারণ। তাই এসব দিক বিবেচনা মাথায় রেখে সরকারকে দ্রুত উদ্যোগী হতে হবে।