দেশে চলমান রাজনৈতিক পরিবেশে সম্প্রতি একটি তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি ব্যক্তিগত অবস্থান ও আগের বক্তব্যের প্রতি আত্মসমালোচনার ভঙ্গিতে মুখ খুলে বলেছেন, ব্যক্তি নয়—দেশ বড়। আর সেই দেশপ্রেমিক শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্যই সময়ের দাবি। একইসঙ্গে তিনি বিভাজনমূলক কথাবার্তার জন্য প্রকাশ্যে দুঃখও প্রকাশ করেছেন, যা বিরল একটি রাজনৈতিক আচরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এই মন্তব্য করেছেন বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেল পাঁচটার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেওয়া একটি পোস্টে। সেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় লেখেন, “ব্যক্তির আদর্শ, সম্মান ও আবেগের চেয়ে দেশ বড়। দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য অনিবার্য। আগেকার যেকোনো বক্তব্য ও শব্দচয়ন, যা বিভাজনমূলক ছিল—সেগুলোর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
এই পোস্টে তিনি আরও বলেন, সরকারে যদি আর একদিনও দায়িত্বে থাকতে হয়, তবু তিনি ‘জুলাই অভ্যুত্থানে’ অংশ নেওয়া সকল শক্তির প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতা রেখে কাজ করতে চান। তিনি পুরনো ‘বন্দোবস্তের বিভেদকামী স্লোগান ও তকমাবাজি’র সমালোচনা করে বলেন, “এসবই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে হত্যাযোগ্য করে তোলে”—এমন অবস্থা দূর করা ছাড়া ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রে গণতন্ত্র ও অন্তর্ভুক্তির আশা অমূলক।
ফেসবুক পোস্টে তথ্য উপদেষ্টা আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে হুমকির মুখে। তিনি স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশের শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ ও আগ্রাসী। দেশপ্রেমিক জনগণ, যারা জুলাই অভ্যুত্থানে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন, তাদের সামনে দীর্ঘ পরীক্ষা। এ পরীক্ষা ঐক্যের এবং ধৈর্যের। এ পরীক্ষা উতরে যেতেই হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্য শুধুমাত্র আত্মসমালোচনামূলক নয়, বরং এটি একটি রাজনৈতিক পুনর্মূল্যায়নের প্রতিফলন। বিশেষ করে “জুলাই অভ্যুত্থান” শব্দটি ব্যবহার করে তিনি একপ্রকারভাবে সেই ঐতিহাসিক ঘটনার প্রতি তার শ্রদ্ধা ও রাজনৈতিক বাস্তবতা মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। একদিনের জন্য হলেও তিনি যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকেন, সেই সময়টুকু যেন বিভেদের পরিবর্তে সম্মান ও ঐক্যের প্রতীক হয়ে থাকে—এমনটাই তার বক্তব্যে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
তাঁর এই পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন মহলে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। অনেকেই এটিকে দায়িত্বশীল নেতৃত্বের একটি লক্ষণ হিসেবে দেখছেন। যদিও রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে এ বক্তব্যের বাস্তব প্রতিফলন কতটা হবে, তা সময়ই বলে দেবে।