জোড়াতালি দিয়ে চলছে দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা

এফএনএস (ওবায়দুল ইসলাম; সৈয়দপুর, নীলফামারী) : | প্রকাশ: ২৪ মে, ২০২৫, ০৪:১৪ পিএম
জোড়াতালি দিয়ে চলছে দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা

নিয়মিত শ্রমিকদের অবসর,নতুন নিয়োগ না হওয়া ও মজুরিভিক্তিক (টিএলআর) শ্রমিককদের ছাঁটাই করায় মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় সার্বিক কার্যক্রম। জনবল সঙ্কটে অনেক মেশিন বন্ধ থাকায় কারখানায় বিরাজ করছে শুনসান নীরবতা। 

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার সূত্র জানায়, এ কারখানায় মঞ্জুরিকৃত ২ হাজার ৮৫৯ জন শ্রমিকের বিপরীতে বর্তমানে নিয়মিত স্থায়ী শ্রমিক রয়েছে মাত্র ৭২৮ জন। বিগত দশ বছরে পর্যায়ক্রমে অবসরে যাওয়ায় নিয়মিত শ্রমিক হ্রাস পেয়ে বর্তমানে শূন্যপদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৩১টি। অথচ সৃষ্ট শূন্যপদের বিপরীতে হয়নি কোনো নতুন নিয়োগ। অবসরের কারণে চলতি বছরেই শূন্যপদের সংখ্যা দাঁড়াবে ৯০ শতাংশ। কারখানায় যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক বিভাগে ক্রমবর্ধমান পদ শূন্যতা রোধ ও সার্বিক নীরবতা শেরিয়ায় ব্যবস্থাপনা সচল রাখতে ২০১৪ সাল থেকে এ কারখানায় দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে (টেম্পারিং লেবার রিক্রুটমেন্ট) বা টিএলআর শ্রমিক নেওয়া হয়। এতে সঙ্কট কিছুটা কমে উৎপাদন স্বাভাবিক হয়। যথাসময়ে দৈনন্দিন কাজ সম্পাদনসহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সক্ষমতা অর্জন করে। প্রকৌশলী ও নিয়মিত দক্ষ কারিগরদের কর্মদক্ষতায় এই মজুরি ভিত্তিতে শ্রমিকরা কারখানাটির প্রায় ৭৫০টি মেশিন সচল রাখতে সক্ষম হন। কিন্তু নিয়মিত অবসর, নিয়োগ না হওয়া ও গত বছরের ৩০ জুন ৫০০ টিএলআর শ্রমিক ছাঁটাই করা হলে এ রেলওয়ে কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসে।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ২৯ টি শপ (সাব ওয়ার্ককশপ) এ দেখা যায়,প্রতিটি শপে প্রয়োজনের তুলনায় মঞ্জুরিকৃত ২০ থেকে ২৫ ভাগ শ্রমিক নিয়ে উৎপাদন কাজ চলছে। বর্তমানে শ্রমিক সঙ্কটে সুনসান এ কারখানা। সেই সঙ্গে উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি কিংবা নষ্ট কোচ মেরামতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেন না বিদ্যমান কারিগররা। ২৯ টি শপে ৭৪০টি মেশিন পরিচালনায় নেই কোনো মিস্ত্রি কিংবা দক্ষ শ্রমিক। দক্ষ জনবলের অভাবে বন্ধ থাকছে অনেক মেশিন।

মমিনুল ইসলাম নামে ফাউন্ডি শপের একজন ছাঁটাই কর্মচারী জানান, ২০১৪ সালে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কাজে যোগদান করি। এরই মধ্যে শপের সব মেশিন চালানোর দক্ষতা অর্জন করেছি। হঠাৎ ছাঁটাই হওয়ায় কর্মহীন হয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছি। ওই শপে এখন নিয়মিত ৬ জন শ্রমিক কাজ করছে। সিঅ্যান্ডএইচ মেশিন শপের কারণে চলতি মিস্ত্রি খন্দকার নুরুজ্জামান অবসরের বছরেই শূন্যপদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯০ শতাংশ। 

তিনি জানান,১৯৮৭ সাল থেকে এখানে কাজ করছি। শুরু থেকেই এ শপে ৮৭ জন কাজ করত। অবসর ও শূন্যপদে নিয়োগ না হওয়ায় কেবল ১৩ জনকে নিয়ে রেলের চাকার কাজ মেরামত করতে হচ্ছে। ওয়াগন শপের অবস্থা আরও করুণ। সেখানে ১৬৮ জনের মধ্যে অবসরের পর কেবল ৪ জন কাজ করছে।

এ ছাড়া ক্যারেজ শপে ৩৯৫ জন মঞ্জুরিকৃত জনবলের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ৮৫ জন। জনবল সঙ্কটে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে বলে মতামত প্রকাশ করেন ওই শপের উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মমিনুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, শ্রমিক সঙ্কটে উৎপাদনসহ সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে মেইনটেন্যান্সে শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিশেষ ট্রেনের রেক মেরামত ও বিদেশ থেকে আনা নতুন ট্রেনের অ্যাসেম্বলিং কাজে বিঘ্ন ঘটবে।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার শিডিউল দফতরের উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (ইনচার্জ) রুহুল আমিন বলেন,অত্যন্ত স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে টিএলআর ও নিয়মিত শ্রমিক দিয়ে উৎপাদন কাজ সচল ছিল। এখন টিএলআর শ্রমিক না থাকায় কাজের কোনো গতি নেই। তাই নিয়মিত শ্রমিকদের ওভারটাইমের মাধ্যমে চাহিদানুযায়ী উৎপাদনের চেষ্টা চলছে।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ  বলেন, জনবল সঙ্কটে টিএলআর শ্রমিকদের মাধ্যমে আমাদের কারখানার সাবেক দক্ষ কর্মচারীরা নব উদ্যমে কাজ করছে। এর কারণে গত ঈদে রেকর্ড আউটটার্ন করা সম্ভব হয়েছে। এখন জনবল কম। নতুন নিয়োগ হলেও হাতেকলমে কাজ দক্ষ না হওয়া পর্যন্ত উৎপাদন কম হবে। তবে কারখানাকে সচল রাখতে আরও জনবল প্রয়োজন। জনবল সঙ্কটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও অর্থ বরাদ্দ পেলে টিএলআর শ্রমিক দিয়ে পুনরায় কর্মচাঞ্চল্যে মুখর হবে এ কারখানা। নয়তো স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে