আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য, তিনজন উর্ধতন প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ দুজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা সেনাবাহিনীর আশ্রয়ে ছিলেন। এছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানার অন্তত ১৫ জন পুলিশ সদস্য সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। যার মধ্যে একজন ওসিও ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার ওই তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
একাধিক সূত্রে জানাগেছে, বিগত ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন সরকারের পতনের পর সারাদেশে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটে। এইজন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রাণ রক্ষার্থে দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনীর প্রকাশিত ওই তালিকা অনুসারে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য ছিলেন একজনই। আর তিনি হচ্ছেন এমএ লতিফ। চট্টগ্রাম-১১ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। এরপর ৯ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের মাদারবাড়ি নসু মালুম মসজিদ এলাকা থেকে তাকে সেনাবাহিনী আটক করে বলে জানানো হয়।
চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর আশ্রয়ে থাকা অন্যরা হলেন, চট্টগ্রামের সাবেক বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি নুর ই আলম মিনা, রাউজানের ইউএনও অংগ্যজাই মারমা, রাউজানের সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিয়াদুল ইসলাম।
ওদিকে, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সেনানিবাসে যারা আশ্রয় নেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন পতেঙ্গা থানার ওসি মাহফুজুর রহমান, দামপাড়া পুলিশ লাইনের কনস্টেবল তুহিন, মাহফুজ ও মাহমুদুল, খুলশী থানার কনস্টেবল সুবল, হালিশহর থানার এএসআই সুমন, শাহাদাত ও সাদেব এবং কনস্টেবল আবু বক্কর, আবুল বাসেদ, মনসুরাবাদ পুলিশ লাইনের কনস্টেবল মেহেদী হাসান ও সজন দে, হালিশহর পুলিশ লাইনের কনস্টেবল আব্দুল্লাহ আল মাসুম ও ইব্রাহিম খলিল এবং হাটহাজারী থানার কনস্টেবল সাহাবুদ্দিন।
সেনাবাহিনীর মতে, পরিস্থিতির তাৎক্ষণিকতা ও মানবিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের পরিচয় যাচাই না করে তাদের জীবন রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এ সময় ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন অসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ৫১৫ জন পুলিশ সদস্য, ১২ জন বিভিন্ন পেশাজীবী, এবং ৫১ জন পরিবারের সদস্যসহ মোট ৬২৬ জনকে সাময়িকভাবে সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। পরে পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে অধিকাংশ ব্যক্তি ১-২ দিনের মধ্যেই সেনানিবাস ত্যাগ করেন। এর মধ্যে ৫ জনকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সেনাবাহিনী আরও জানায়, আশ্রয়প্রার্থীদের বিষয়ে ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আইএসপিআর থেকে প্রকাশ করা হয় এবং একই দিনে ১৯৩ জনের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এ বিষয়টি তখনই মীমাংসিত ছিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
তবে দুঃখ প্রকাশ করে সেনাবাহিনী জানায়, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে। এ প্রেক্ষাপটে বিভ্রান্তি দূর করতে ৬২৬ জন আশ্রয়প্রার্থীর একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা (যার মধ্যে ৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও ১ জন এনএসআই সদস্য অন্তর্ভুক্ত) বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে।