অবিলম্বে রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থানে হতাশ বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ২৭ মে, ২০২৫, ০৫:৪৫ পিএম | প্রকাশ: ২৭ মে, ২০২৫, ০৫:৪৫ পিএম
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থানে হতাশ বিএনপি

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ চলমান থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সুস্পষ্ট রোডম্যাপের অনুপস্থিতিতে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। দলটি জানিয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পরও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে, তা অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর। এতে করে দেশের জনগণের মধ্যে সন্দেহ ও সংশয় আরও ঘনীভূত হয়েছে বলে মনে করে বিএনপি।

মঙ্গলবার (২৭ মে) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এর আগের দিন (২৬ মে) রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ড. মোশাররফ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে গত ২৪ মে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। একই দিনে আরও দুটি রাজনৈতিক দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, এবং পরদিন আরও বিশটি দলের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এসব সংলাপের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের মাধ্যমে যেসব বক্তব্য সরকার উপস্থাপন করেছে, তাতে নির্বাচন নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের উল্লেখ নেই। এ বিষয়টিকে 'নির্বাচনী অনিশ্চয়তা' হিসেবে দেখছে বিএনপি।

তিনি আরও বলেন, “আমরা কোনো সময়েই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইনি। বরং আমরা ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চাইছি। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে তা একযোগে চলতে পারে।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, শনিবার (২৪ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিও ছিল ‘অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর’। এতে সরকারের নিরপেক্ষতা এবং কার্যক্রম পরিচালনায় দুর্বলতার অভিযোগও তোলেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা। তিনি বলেন, “বিভিন্ন মহলের অযৌক্তিক ও এখতিয়ারবহির্ভূত দাবির ফলে সরকারের কাজের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে—এই অভিযোগ সরকার নিজের ব্যর্থতা ঢাকতেই করেছে।”

বিএনপির পক্ষ থেকে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণের দাবি জানিয়ে বলা হয়, সরকারের সাম্প্রতিক ভূমিকা জনমনে আইনের শাসন নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের পক্ষে আদালতের রায় ও গেজেট প্রকাশ হলেও তার শপথ গ্রহণের কোনো উদ্যোগ না নেওয়াকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি দাবি করে, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী অবিলম্বে একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার গঠনের জন্য একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা এখন সময়ের দাবি। অন্যথায়, সরকারের প্রতি বিএনপির সহযোগিতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে যাবে।

ড. মোশাররফ বলেন, “ডিসেম্বরের পর নির্বাচন আয়োজন বাস্তবসম্মত নয়। কারণ ফেব্রুয়ারিতে রয়েছে রমজান, এসএসসি পরীক্ষা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি। আমরা ইতিবাচক বার্তা আশা করেছিলাম, কিন্তু সেটি আসেনি। সংস্কারের অজুহাতে নির্বাচন বিলম্বিত হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “দেশে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরতন্ত্রের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য এবং জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচনই একমাত্র পথ। সেক্ষেত্রে নির্বাচন, বিচার ও সংস্কারের প্রক্রিয়াকে একত্রে এগিয়ে নিতে হবে এবং এ লক্ষ্যেই আমরা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করে চলেছি।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে