কালীগঞ্জ হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রামের কার্যক্রম বন্ধ

এফএনএস (টিপু সুলতান; কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ) : | প্রকাশ: ২৭ মে, ২০২৫, ০৫:৫৪ পিএম
কালীগঞ্জ হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রামের কার্যক্রম বন্ধ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করায় আধুনিক মেশিনটি বিকল হতে বসেছে। গত তিন মাস ধরে রোগীদের আল্ট্রাসনো কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে হাসাপাতালে আসা রোগীরা সময় ও আর্থিক ভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বেসরকারি হাসপাতালে বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার আল্ট্রাসনো করতে গিয়ে গড়ে ৫ থেকে ৮ গুন টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে রোগীদের। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্মবিত্ত পরিবারের মানুষ। কবে নাগাদ আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটির সেবা কার্যক্রম নিয়মিত হবে তা নিশ্চিত করতে পারছেনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন মানুষ পরীক্ষা করাতে না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। মেশিন টি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।

২০২৪ সালের ১৫ জুন জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) থেকে হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি প্রদান করা হয়। মেশিনটি স্থাপনের পর থেকে ২৯৬ টি আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করা হয়। আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করার জন্য একজন সনোলজিস্ট থাকার কথা থাকলেও উপজেলা হাসপাতালটির জনবল কাঠামো অনুযায়ি সনোলজিস্টের কোন পদ নেই। পূর্বের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন নিজেই আল্ট্রাসনোগ্রাম কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তিনি এ হাসপাতাল থেকে বদলি হওয়ার পর থেকে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৮ ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেশিনটি ব্যবহার করে আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে প্রেগনেন্সি জনিত আল্ট্রাসনো করতে ১১০ টাকা। আর পুরো পেটের আল্ট্রাসনো করতে ব্যয় হয় ২২০ টাকা। একই আল্ট্রাসনো বেসরকারি হাসপাতালে বা ডায়গনস্টিক সেন্টারে করতে খরচ ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা হারে দিতে হচ্ছে। হাসপাতালের আল্ট্রাসনো কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রোগীদের ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে বাধ্য হয়েই বাড়তি টাকা দিয়েই আল্ট্রাসনো করছেন রোগীরা। পেটের সমস্যা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন গৃহবধূ সাথিয়া খাতুন। ডাক্তার নির্দেশনা দিলে অর্থাভাবে আল্ট্রাসনো করতে পারেননি তিনি। কেননা হাসপাতালের আল্ট্রাসনো বিভাগে গিয়ে জানতে পারেন মেশিনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কাছে পরীক্ষা করনের টাকা না থাকায় আল্ট্রাসনো না করে বাড়ি ফিরে যান সাথিয়া। আরো কয়েকজন রোগী ও স্বজন জানান, একমাত্র আল্ট্রাসনো মেশিন দিয়ে এই হাসপাতালের আল্ট্রাসনোগ্রাফি জনিত পরীক্ষা কার্যক্রম চলছিলো। বর্তমানে আল্ট্রাসনো সেবা বন্ধ থাকা রীতিমতো দুঃখজনক। এই সেবা নিয়মিত চালু রাখার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের চিন্তা করা উচিৎ। অন্যথায় তাদের মতো দুরদুরন্ত থেকে আসা মাুুষের চরম ভোগান্তির শিকার হবেন। পাশাপাশি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।সিনিয়র স্টাফ নার্স ও আল্ট্রাসনোগ্রাফির সহকারী আসমা খাতুন জানান, একমাত্র আল্ট্রাসনো মেশিনের কার্যক্রম দীর্ঘদিন চলমান না থাকায় একদিকে যেমন সাধারণ রোগীরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে মূল্যবান এই মেশিনটিও সক্রিয়তা হারাচ্ছে এমন কি মেশিন টি ক্রমান্বয়ে বিকল হয়ে যেতে পারে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নাকি বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন। 

কালীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. রেজাউল ইসলাম জানান, বেশ কিছুদিন ধরে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। আমি একদিন মেশিনটিতে পরীক্ষা করেছি। কবে নাগাদ মেশিনটির কার্যক্রম নিয়মিত হবে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে দ্রুত আল্ট্রাসনো বিভাগ সচলের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও তিনি যোগ করেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে