রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ফুড কোর্টে বন্ধুদের সঙ্গে খেতে গিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য। কিন্তু সেখানে এক চক্রের হাতে তার মৃত্যু ঘটে একটি সামান্য কৌতূহলের সূত্র ধরে। মাত্র কয়েক মিনিটের এক রুদ্ধশ্বাস ঘটনায় তরুণ এই শিক্ষার্থী ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, গত ১৩ মে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য এবং তার দুই বন্ধু মোটরসাইকেলযোগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান। সেখানে ফুড কোর্ট এলাকায় থাকা মাদক চক্রের একজন সদস্য রাব্বীর হাতে একটি ট্রেজারগান (ইলেকট্রিক শকার) ছিল। এটি দেখে সাম্য জানতে চান, এটি কী এবং কীভাবে কাজ করে। তার এই কৌতূহলকে কেন্দ্র করেই ঘটে ভয়াবহ এক ঘটনা।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানান, সাম্য ট্রেজারগানটি হাতে নিতে চাইলে রাব্বী ও তার সহযোগীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এরপর তা ধস্তাধস্তিতে রূপ নেয়। মাদক চক্রের অন্য সদস্যরাও সেখানে এসে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে। এক পর্যায়ে রাব্বী সুইচ গিয়ার ছুরি দিয়ে সাম্যকে সংবেদনশীল স্থানে আঘাত করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সাম্য ঘটনাস্থলেই মারাত্মকভাবে আহত হন এবং রাত ১২টার কিছু পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, "আঘাতটি এমন জায়গায় করা হয়েছে, যেখানে কয়েক মিনিটের মধ্যেই মৃত্যু ঘটে। এটি ছিল অত্যন্ত সেনসিটিভ জায়গা।" তিনি আরও বলেন, “ঘটনার পরপরই আমাদের টিম তৎপরতা শুরু করে। রমনা ডিসিকে ফোন দেওয়া হয় এবং প্রথম রাতেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে কক্সবাজার, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে আরও আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
তদন্তে জানা যায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক ব্যবসা তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে চলে। একটি তিন নেতার মাজারের পাশে, একটি উদ্যানে মাঝখানে এবং একটি ছবির হাট এলাকায়। মেহেদী নামের একজন চক্রনেতা সেই দিন কালো ব্যাগে সুইচ গিয়ার ছুরি এনে অন্য সদস্যদের মধ্যে সরবরাহ করেন। তার দলেই ছিল গ্রেপ্তারকৃত রাব্বীসহ বাকিরা। এখন পর্যন্ত এই মামলায় মোট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং এর মধ্যে দুইজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ডিএমপি বলছে, তদন্ত এখনো চলমান। হত্যাকাণ্ডটি তাৎক্ষণিক উত্তেজনার ফল, নাকি এর পেছনে আরও কোনো গভীর উদ্দেশ্য রয়েছে—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা, তাও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো জায়গায় এমন একটি ঘটনা নগরবাসী ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ডিএমপি কমিশনার জানান, মাদক চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং উদ্যান এলাকায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে।