বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন দরকার

এফএনএস
| আপডেট: ২৮ মে, ২০২৫, ০৯:১৫ পিএম | প্রকাশ: ২৮ মে, ২০২৫, ০৯:১৫ পিএম
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন দরকার

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশে কোনো আধুনিক ও পরিবেশসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চলছে অনেকটা ‘দিন আনি, দিন খাই’ এর মতো করে। বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে, আর কোনো ধরনের পৃথক্করণ ছাড়াই যতটুকু পারা যাচ্ছে প্রাথমিকভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাকিটা চলে যাচ্ছে নদী, খাল ও পানিনিষ্কাশন নালায়। এই সনাতন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবেশগত দিকটি থাকছে উপেক্ষিত। এমন ব্যবস্থাপনা নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে ঢাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঢিলেমি ও বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। ফলে রাজধানীর সড়কে খোলা বর্জ্য পড়ে থাকছে, একই সঙ্গে নতুন নতুন জায়গায় বর্জ্য ফেলার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। এতে মাছির বংশবিস্তারে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নগরবাসীর বড় ভোগান্তি ও আতঙ্কের নাম মশা। এবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মাছিও। গত কয়েক মাসে ঢাকায় বেড়েছে মাছির উপদ্রব। ত্রুটিপূর্ণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে মশার সঙ্গে মাছির উপদ্রবও বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে মাছিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই। গৃহস্থালি ভেজা বর্জ্য মাছির বংশবিস্তারে সহায়ক। অপরিষ্কার, নোংরা, নর্দমার মতো জায়গায় মাছি জন্মে। আমরা দেখতে পাচ্ছি চারদিকেই নোংরা-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। সড়ক ও বাসাবাড়িতে বর্জ্যরে পরিমাণ খুব বেড়েছে। ফলে মাছি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। মশা-মাছি বৃদ্ধির বিষয়টি সরাসরি জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। মাছি বাড়লে টাইফয়েড, ডায়রিয়া, আমাশয়ের প্রকোপ বাড়ে। কোনো সন্দেহ নেই আমাদের বর্জ্য অব্যবস্থাপনার প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যে। বর্জ্য বাড়লে মশা-মাছি ও ছোট ইঁদুর বেড়ে যায়। মাছি বর্জ্য থেকে জীবাণু বহন করে খাবারে নিয়ে ফেলে। ওই খাবার খেয়ে মানুষ টাইফয়েড, কলেরার মতো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়। যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ, দূষিত বায়ু আর দুর্গন্ধ নগরবাসীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। শহরের পরিবেশের উপর এটা সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষত এই সকল আবর্জনার স্তূপ হতে নির্গত দূষিত পদার্থ বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে নিকটস্থ জলাশয়গুলিকে দূষিত করছে, যা জনস্বাস্থ্য এবং জীববৈচিত্র্যের উভয়ের জন্যই মারাত্মক ক্ষতিকর। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য পোড়ানো হচ্ছে, যাহার ফলে বায়ুমণ্ডলে মিশছে বিষাক্ত ধোঁয়া। এই সকল কার্যকলাপ পরিবেশ দূষণকে আরো তীব্র করে তুলছে এবং নগরবাসীকে শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন করছে। এই পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। রাজধানীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ত্রুটি দূরীকরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সেইসাথে নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ, পর্যাপ্ত ডাস্টবিন স্থাপন এবং বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির প্রয়োগ আজ সময়ের অপরিহার্য দাবি। শুধু তাই নয়, নগরবাসীকেও এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিয়মাবলি মেনে চলতে হবে। তাহলেই মশা মাছির উপদ্রব কমানো সম্ভব। আর তাতে স্বস্তি পাবে নগরবাসী।