দেশজুড়ে চলমান পূর্ণদিবস কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণা করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। বেতন বৈষম্য ও পদোন্নতিসংক্রান্ত তিন দফা দাবিতে কর্মসূচি চালিয়ে আসা শিক্ষকরা সরকার পক্ষ থেকে দৃশ্যমান আশ্বাস পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী রোববার (১ জুন) থেকে তারা শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল।
সংগঠনের পক্ষ থেকে ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ সংবাদমাধ্যমকে জানান, আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত থাকবে। এরমধ্যে যদি দাবি বাস্তবায়নের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না হয়, তবে তারা আবারও কর্মসূচিতে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।
সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে:
১. প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গঠিত কনসালটেশন কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদকে শুরুর পদ (অ্যান্ট্রি পোস্ট) ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ।
২. ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন।
৩. প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
শিক্ষক নেতারা জানান, এই দাবিগুলো ইতোমধ্যে সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতির প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। উচ্চতর গ্রেড বিষয়ক জটিলতা নিরসনও চলমান। এছাড়া ১১তম গ্রেডে সহকারী শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণের প্রস্তাব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে এবং খুব শিগগির অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়েছে।
ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হবে মঙ্গলবার (৩ জুন) থেকে। ফলে রোববার ও সোমবার—২ দিন বিদ্যালয় খোলা থাকবে। এ সময়ে শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে যাবেন বলে জানান ঐক্য পরিষদের নেতারা। এর ফলে দীর্ঘদিন পর স্বস্তি ফিরবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে, যারা কর্মবিরতির কারণে বিদ্যালয়ে এসেও শ্রেণিকক্ষে পাঠ গ্রহণ করতে পারেনি।
উল্লেখ্য, চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২৬ মে থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু হয়েছিল। তারও আগে পর্যায়ক্রমে ঘণ্টাপ্রতি ও অর্ধদিবস কর্মবিরতির মাধ্যমে শিক্ষকেরা দাবিদাওয়া জানিয়ে আসছিলেন। ফলে দেশের প্রায় ৬৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাড়ে তিন লাখ সহকারী শিক্ষক কর্মবিরতিতে অংশ নেন এবং শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।