কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর পৌরসভার হাশেমবাজার মাঝিপাড়া এলাকার হতদরিদ্র পরিবার আদুরী রানীর। স্বামী সন্তোষ কুমার দিনমজুরের কাজ করেন। ২ মেয়ে ও ২ জমজ ছেলেসহ ৬ সদস্যের পরিবার। স্বামীর স্বল্প আয় আর সংসারের অভাব অনটনে এক-দু’বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো তাদের। এর মধ্যে সন্তানদের পড়ালেখা করানো নিয়েও চরম হতাশায় দিন কাটতো আদুরী বেগমের। নিজেরও কোনো আয়ের উৎস না থাকায় ৬ সদস্যের টানাপরেনের সংসারে দিনে দিনে নেমে আসতে থাকে ঘোর অমানিশা। মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতির সহযোগিতায় পারিবারিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করে আদুরী রানীকে দেয়া হয় আয় বৃদ্ধি এবং ব্যবসা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণে নিয়মিত উঠান অধিবেশন, টিম মিটিং এবং প্রাণিসম্পদ ও কৃষি বিভাগের পরামর্শের পর আদুরি তার বাড়িতে খামার ব্যবস্থাপনার জন্য একটি চূড়াšন্ত পরিকল্পনা তৈরি করেন। আদুরী রানীকে ব্যবসা শুরু করার জন্য সিএনবি প্রকল্প থেকে ১৭ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। সেই টাকা দিয়ে তিনি দুটি ছাগল, আটটি মুরগি ও প্রয়োজনীয় উপকরণ ও পশুখাদ্য কিনে শুরু করেন গৃহপালিত হাঁস, মুরগী ও ছাগল পালন। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে নিয়মিত পরামর্শ এবং চিকিৎসা সহায়তায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে তার ছোট্ট খামার । বর্তমানে তার খামারে মোট ৮টি ছাগল, ১২টি হাঁস ও ২৫টি মুরগি রয়েছে। তার এই পারিবারিক খামারে হাঁস-মুরগির ডিম উৎপাদন করে তার পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে আয় করছেন অনেকটাই। এই আয় দিয়ে সচ্ছলতা ফিরেছে তাদের। অর্থাভাবে ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে না পারলেও এখন স্কুলগামী হয়েছেন তারা। পাচ্ছেন পুষ্টিকর খাবারও। এদিকে খামারের সফলতার হাতছানী দেখে ব্র্যাক থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তার স্বামীও শুরু করেন মাছের ব্যবসা। অবশিষ্ট কিছু অর্থ বিনিয়োগ করে ছোট্ট খামারে। পাশাপাশি কৃষি বিভাগের পরামর্শে পারিবারিক পুষ্টি বাগান করেন তারা। এতে করে শাক-সবজি ও বিভিন্ন জাতের পারিবারিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করেও আয় বেড়েছে তাদের। আদুরী রানী জানায় ১৭ হাজার টাকা দিয়ে পারিবারিক খামার করে এখন স্বাবলম্বী তার পরিবার। এখন সঠিকভাবে তিনবেলা ডাল, ভাত খেয়ে বাঁচতে পারছেন তারা। পড়াশোনা করছেন ২ ছেলে ও ২ মেয়ে। সংসারের যাবতীয় খরচ চলছে বেশ সাচ্ছন্দ্যেই। এছাড়াও সমাজে বাল্যবিবাহ রোধে এবং প্রতিবেশী মেয়েদর বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে যুব সংগঠন ও ইউনিয়ন পরিষদ বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির সাথে কাজ করছেন তিনি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার শাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে পারিবারিক খামারীসহ সকল খামারীদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। তাদের জীবনমান উন্নয়নে আমাদের প্রাণিসম্পদ টিম কাজ করে যাচ্ছে।