নীলফামারীর সৈয়দপুর গ্রীন লাইফ নামে বেসরকারী একটি হাসপাতালে সরকারি নিয়ম বহির্ভুতভাবে চলে আসছে। হাসপাতালটি দীর্ঘদিন থেকে এভাবে চলে আসলেও দায়িত্বে থাকা জেলা সিভিল সার্জন ছিল উদাসীন। অভিযোগ রয়েছে ওই সিভিল সার্জন মোটা অংকের অর্থ নিয়ে এভাবে নাম সর্বস্বহীন নামে মাত্র হাসপাতাল এগুলোকে মানুষ মারার ব্যবসা করতে সহযোগিতা করছে।
এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে সৈয়দপুর গ্রীন লাইফ বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে একজন ভাল রোগীকে অপারেশন করাতে হবে এমন কথা বলে মোটা অংকের টাকা চুক্তি হয়। তারপর করা হয় অপারেশন। অপারেশন করার সময় যে কোন ভুলে মারা যায় ওই নারী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এটিকে ধামাচাপা দিতে তরিঘরি মৃত নারীকে রংপুর হাসপাতালে নিতে হবে এমন কথা বলে তারা নিজেই এ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে। কেন তারা এতো তরিঘরি করছে এ বিষয়টি মৃতের আত্বীয়ের মাঝে সন্দেহ দেখা দেয়। পরে তর্ক বিতর্কের পর প্রথমে ওই মৃত নারীকে নেয়া হয় সৈয়দপুর সরকারি হাসপাতালে। সেখানে নেয়ার পর চিকিৎসক বলেন ওই নারী অনেক আগেই মারা গেছেন। এরপর মৃতের স্বজনদের সাথে রাতেই তিন লাখ টাকার বিনিময়ে মৃতের মৃত্যু বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়।
এটি ঘটে ২৯ মে রাতে শহরের শহীদ তুলশীরাম সড়কে অবস্থিত গ্রীন লাইফ ল্যাব অ্যান্ড হসপিটালে। মৃত সোগরা বেগম (২৮) সৈয়দপুর পৌরসভার বাঁশবাড়ী আমিন মোড় এলাকার মো.আরিফ হোসেনের স্ত্রী।
পরিবার জানায়, সোগরা বেগম ৪৫ দিনের গর্ভবতী ছিলেন। প্রস্রাবে সংক্রমণের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতে তাঁকে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গাইনী চিকিৎসক ডা.ওয়াজেরা সিফাত জাহান শান্ত দ্রুত অপারেশনের পরামর্শ দিলে রাতেই অপারেশন সম্পন্ন হয়। তবে রাত ৩টার দিকে সোগরার মারা যায়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ দ্রুত সরিয়ে ফেলার চেষ্টা চালায় এবং নিজেদের অ্যাম্বুলেন্সে করে রংপুরে নেয়ার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু রোগীর স্বজনদের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে তাঁকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, রোগী অনেক আগেই মারা গেছেন। এতে রোগীর স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কৌশলে সাড়ে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। স্বজনরা শেষপর্যন্ত লাশ বাড়িতে নিয়ে যায়। ঘটনার পর থেকে অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা.ওয়াজেরা সিফাত জাহান (শান্ত) পলাতক। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তার কোন খোঁজ দিতে পারেনি। ম্যানেজার শাহিনুর ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি শুধু বলেন,আমাদের এমডি নাজমুল হুদা জুয়েল নওগাঁয় আছেন। তিনি এলেই বিস্তারিত জানা যাবে। পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হুদা জুয়েলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। আমরা অপারেশন না করলেও হয়তো সে মারা যেত। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি। মারা যাওয়ার পর ক্ষতিপূরণ দিয়েছি, এখন আর কোনো অভিযোগ থাকার কথা নয়।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ ফইম উদ্দিন জানান,এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।