ভেড়ামারায় শফিকুলের ঘুষ বাণিজ্যে অতিষ্ঠ সেবাগ্রহীতারা

এফএনএস (শাহ্ জামাল; ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া) : | প্রকাশ: ৩১ মে, ২০২৫, ০৫:৫৬ পিএম
ভেড়ামারায় শফিকুলের ঘুষ বাণিজ্যে অতিষ্ঠ সেবাগ্রহীতারা

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার মোকারিমপুর ইউনিয়নের তহশিলদার শফিকুল ইসলাম শফির বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের গুরুত্বর অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, টাকা ছাড়া কোন কাজই করেন না ওই তহশিলদার। আবার নিয়মিত অফিসও করেন না তিনি।  সপ্তাহের ৩ দিন অফিস করেই তিনি হাতিয়ে নেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এ বিষয়ে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার ভুমি আনোয়ার হোসাইনের কাছে অভিযোগ দাখিল করেও কোন প্রতিকার মেলেনি।

ভেড়ামারা পৌরসভার কলেজপাড়ার বাসিন্দা সোহেল মাহমুদ জানান, ৪২ শতক জমির খাজনা দেওয়ার জন্য তিনি মোকারিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যান। তহশিলদার শফিকুল ইসলামকে খাজনার কথা বলতেই তিনি পাশের সিটের কম্পিউটার চালককে দেখিয়ে দেন। কম্পিউটার চালক ৭০ হাজার টাকা দাবী করে বসেন। এতো টাকার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তহশিলদার শফিকুল জানান, সব কিছুই এখন ডিজিটল। খাজনা দিতে হলে সমস্ত জমির খাজনা দিতে হয়। এজন্য ৭০ হাজার টাকায় লাগবে। সোহেল আরও বলেন, আমি ও আমার ভাই সাব্বির, আমাদের মোকারিমপুর ইউনিয়নের গোলাপনগর মোজার জেএল-৯ এবং আরএস ৬৮ খতিয়ানের,  ৪৯২৮ ও ৪৯৩০ দাগের জমির খাজনা বাংলা ১৪২৮ সাল পর্যন্ত ২৪৪ ও ১৫৮ টাকা বাৎসরিক হারে পরিশোধ করেছি। তার খাজনা বাকি রয়েছে মাত্র ৩-৪ বছরের। তাছাড়াও তার বাবার ১ একর ৪২ শতক জমির অধিকাংশ জমির খাজনা তার ভাইয়েরা পরিশোধ করেছে। মূলত মেয়ের বিয়ের জন্য আমার অংশের ৪২ শতক জমি বিক্রয়ের জন্য বায়না করেছি। খাজনা হয়ে গেলেই রেজিস্ট্রি হবে। তহশিলদার শফিকুল মুলত এরই সুযোগ নিচ্ছেন। 

ভুক্তভোগী সোহেলের দাবি, "বিগত ৬ মাসে অন্তত ২৫ বার তিনি মোকাররমপুর ভূমি অফিসে গিয়েছেন জমির খাজনা দিতে। কিন্তু তহশিলদার শফিকুল তাকে কোন সাহায্যই করেনি। উল্টো সহকারির মাধ্যমে ২ হাজার টাকার খাজনার বিপরীতে চেয়েছেন ৭০ হাজার টাকা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার ভূমি, দূর্নীতি দমন কমিশন সহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পায় নি। বাধ্য হয়ে ভেড়ামারা রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক ইয়ারুলের মাধ্যমে গত ৮মে ৪০ হাজার টাকায় দফারফা করেছি। ১৫ই মে বৃহস্পতিবার মোকারিমপুর ভূমি অফিসে আমাকে দুবার ডাকা হয়। সবায় চলে যাওয়ার পর বিকেল ৫টার সময় ৪০ হাজার টাকা তহশিলদার শফিকুল গ্রহন করে। এরপর আমার কাজ শুরু করেন তিনি। মাঝপথে বিদ্যুৎ চলে গেলে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। শনিবারে খাজনার রশিদ দেওয়ার কথা জানালে, ওই টাকা ফেরত নিয়ে চলে আসি। 

সোহেল মাহমুদের স্ত্রী আলীয়া খাতুন জানান, আমরা কোথাও থেকে কোন সাহায্য পাইনি। দূর্নীতিবাজ তহশিলদার শফিকুল’র ঘুষ বানিজ্যে অতিষ্ট হয়ে দীর্ঘদিনেও আমরা জমির খাজনা দিতে পারি নাই। আমার মেয়ের বিয়ে আটকে আছে। আজ টাকা হাতে পেলেই কাল বিয়ে হবে। তার বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ। কিন্তু কোন খুঁটির জোরে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন, তা বোধ গম্য নয়। 

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে একাধিক দিন সরেজমিনে যাওয়া হয় মোকারিমপুর ভূমি অফিসে। কিন্তু তাকে অধিকাংশ দিনই পাওয়া যায়নি। সহকারী তহশিলদার নাজমুল দাবি করে বলেন, অসুস্থ থাকায় হয়তো স্যার আসেননি। এছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে আশা ভুক্তভোগীরা সেবা না পেয়ে চলে যেতে দেখা গেছে। আবার কোন কোন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই জমির খারিজ, খাজনা দেওয়ার জন্য তারাও এই অফিসে ঘোরাঘুরি করছেন। ইচ্ছাকৃতভাবেই তহশিলদার শফিকুল হয়রানি করছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে দাবি করছেন মোটা অংকের টাকা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শফিকুল আধুনিক মোটরসাইকেল রয়েল এনফিল্ড সহ বিভিন্ন নামিদামি ব্যান্ডের গাড়িতে চড়ে অফিসে আসেন।

মোকাররমপুর ভূমি অফিসের তহশিলদার শফিকুল ইসলামের সাথে ২৯মে(বৃহস্পতিবার) যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, সোহেল মাহমুদ নামে আমি কাউকে  চিনিনা। পরবর্তীতে দলিল লেখক ইয়ারুলের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা নেওয়ার কথা বললে, তিনি বলেন," এবার চিনতে পেরেছি"। আমার টেবিলের উপরে রেখেছিল তবে সেই টাকা আমি নেই নাই। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সেবা গ্রহীতার ভোগান্তির বিষয়টা এড়িয়ে যান।

ভেড়ামারা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনোয়ার হোসাইনকে তহশিলদার শফিকুলের ৪০ হাজার টাকায় খাজনা দেওযার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, আমার জানামতে খাজনা দিতে কখনোই এত টাকা লাগেনা। পূর্ববর্তী খাজনা রশিদ দেখে তিনি বলেন, বাৎসরিক হিসেবে ২৪৪ টাকা লাগবে। তাছাড়া  এই জমির খাজনা আরএস রেকর্ড অনুযায়ী দেয়া যাবে। ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে, অবশ্যই ওই তহশিলদার শফিকুলের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে