বাংলাদেশে প্রতি বছর যত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, তার মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা তুলনামুলকভাবে বেশি। মারাত্মক এসব দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানিও ঘটে। এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হেলমেট নিয়ে মোটরসাইকেল চালকদের সচেতনতার অভাব। হেলমেট ব্যবহারের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি এড়ানো। কিন্তু আমাদের দেশের মোটরসাইকেল চালকদের অনেকেই হেলমেট ব্যবহারে উদাসীন। তবে রাস্তায় ট্র্যাফিক আইন মেনে চলতে হেলমেট পরার কোনো বিকল্প নেই। তাই নিয়ম রক্ষার খাতিরে হলেও অনেকেই সস্তা হেলমেট বেছে নেন। কিন্তু এতে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঝুঁকি থেকেই যায়। একটা সময় ছিল, বেশিরভাগ মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী হেলমেট পরতেন না। তবে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহণ আইনের ‘কারাদণ্ড’ ও ‘জরিমানা’ এড়াতে গত দুই-তিন বছর ধরে চিত্র পাল্টে গেছে। চালক ও আরোহীরা এখন হেলমেট পরছেন। কিন্তু হেলমেট পরার হার বাড়লেও কমেনি বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণের হার। এর কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে নিম্নমানের হেলমেটকে। রাস্তাঘাটে সচরাচর দেখা যায়, মামলার ভয়ে হেলমেট পরেন চালকরা। তবে তা বেশির ভাগই নিম্নমানের। যাত্রীদেরও দেওয়া হয় মানহীন এসব হেলমেট। এতে মামলা থেকে বাঁচলেও অসতর্কতাবশত দুর্ঘটনায় পড়লে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, ফ্র্যাকচার এমনকি মৃত্যুও ঘটে অহরহ। সংশ্লিষ্টদের মতে, মানহীন হেলমেট যাত্রীদের সুরক্ষার বদলে উল্টো মৃত্যু ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে— রাজধানীসহ সারা দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৮৮ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে হেলমেট না পরার কারণে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে— হেলমেট থাকা সত্ত্বেও দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। এর একমাত্র কারণ নিম্নমানের হেলমেটের ব্যবহার। রাস্তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে হেলমেট একটি অপরিহার্য সরঞ্জাম। হেলমেট মাথাকে দুর্ঘটনার আঘাত থেকে রক্ষা করে। কোনো আকস্মিক সংঘর্ষে হেলমেট মাথায় সরাসরি আঘাত না লেগে তা শোষণ করতে সাহায্য করে। হেলমেট পরিধান করলে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। কারণ এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয় যে নিজের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে চলা আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে বাইক চালনার সময় মনোযোগও বেশি থাকে। তাই অবশ্যই হেলমেট ভালোমানের হওয়া উচিত। বর্তমানে বেশিরভাগ আধুনিক হেলমেটে থাকে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা, যা মাথার ভেতরের অংশকে শীতল রাখে এবং ঘাম হওয়া রোধ করে। এছাড়া, হেলমেটের ফিটিং আরামদায়ক হলে দীর্ঘপথ চলতেও এটি মাথায় কোনো অস্বস্তি সৃষ্টি করে না। মোটরসাইকেল আরোহীদের ভালো মানের হেলমেট ব্যবহারে সচেতন করতে সরকারের পক্ষ থেকে বেশি বেশি প্রচারণা চালাতে হবে। পাশাপাশি চালক এবং যাত্রী সবার মধ্যেই এই সচেতনতাবোধ জাগ্রত হতে হবে।