মানুষকেন্দ্রিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রথমবার ছোট বাজেট প্রস্তাব: অর্থ উপদেষ্টা

এফএনএস ডেস্ক | প্রকাশ: ২ জুন, ২০২৫, ০৪:৩৩ পিএম
মানুষকেন্দ্রিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রথমবার ছোট বাজেট প্রস্তাব: অর্থ উপদেষ্টা

২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে দেশে নতুন ধারা সূচিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর এই প্রথমবারের মতো প্রস্তাবিত বাজেটের আকার পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কম। অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এই বাজেটকে ‘ব্যতিক্রমধর্মী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

সোমবার (২ জুন) দুপুর ৩টায় এক সংবাদ সম্মেলনে বেতার ও টেলিভিশনের মাধ্যমে জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেন অর্থ উপদেষ্টা। জাতীয় সংসদ না থাকায় এবার সংসদে বাজেট উপস্থাপন হয়নি। এটি দেশের ৫৪তম বাজেট এবং অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে প্রথম প্রস্তাবিত বাজেট।

অর্থ উপদেষ্টার ভাষ্যমতে, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রস্তাবিত বাজেটের আকার আগের বছরের তুলনায় কমিয়ে ধরা হয়েছে। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম।

প্রবৃদ্ধিনির্ভর বাজেট কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে এবারের বাজেটে ‘সামগ্রিক উন্নয়নের’ ধারণায় জোর দেওয়া হয়েছে বলে জানান সালেহউদ্দিন আহমেদ। তার ভাষায়, ‘ভৌত অবকাঠামোর পরিবর্তে এবার মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ, জীবনমান উন্নয়ন, সুশাসন এবং বৈষম্যহীন পরিবেশ নিশ্চিত করাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’

বাজেটে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে—

১. শিক্ষা

২. স্বাস্থ্য

৩. নাগরিক সুবিধা

৪. কর্মসংস্থান

৫. সুশাসন প্রতিষ্ঠা

তিনি বলেন, ‘মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, জীবিকার নিরাপত্তা এবং বৈষম্যহীন পরিবেশ ছাড়া কোনো রাষ্ট্র কার্যকর থাকতে পারে না। সমাজের ভিত দুর্বল হয়ে পড়ে।’

অর্থ উপদেষ্টা মূল্যস্ফীতির ওপরও গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখতে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা জরুরি। এর জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও স্থিতিশীল থাকা প্রয়োজন।’

তিনি জানান, এপ্রিল মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হচ্ছে। এছাড়া, বাজারভিত্তিক মুদ্রাবিনিময় হার চালু করা হয়েছে ১৪ মে।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে তুলে ধরেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি জানান, গত বছর আকস্মিক বন্যার কারণে আউশ ও আমন ফসলে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় সরকার ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং ৭ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে ৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ২ লাখ মেট্রিক টন গম ইতোমধ্যে আমদানি করা হয়েছে।

একই সঙ্গে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে এবং উৎপাদন বাড়াতে সারসহ কৃষি উপকরণে ভর্তুকি অব্যাহত রয়েছে। সার মজুদের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে আত্মোৎসর্গকারীরা আমাদের সামনে একটি বিরল সুযোগ তৈরি করে দিয়ে গেছেন। সেই পথ ধরে রাষ্ট্রের সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করাই আমাদের লক্ষ্য।’

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার দিকেও মনোযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে